নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

দূষণকারীকেই দিতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টাকা

শেখ হাসিনা-সায়মা-টিউলিপকে অভিনন্দন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকেই টাকা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জাতীয় নীতি-২০১৯ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া আরো দুটি আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল আইন-২০১৯, বাংলাদেশ বাতিঘর আইন-২০১৯। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের শুরুতে বহির্বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েকটি অর্জন, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যে উদ্ভাবনী নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় স্থান পাওয়া ও ভাগনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক লন্ডনে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নিয়মিত আলোচ্যসূচির আগে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদে শীর্ষ নারী সরকার প্রধান হিসেবে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ‘ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া’ গত ৯ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।

তিনি আরো বলেন, ভারতের স্বনামধন্য সংস্থা ‘ড. এপিজে আবদুল কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ এ ভূষিত করে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমুখী সম্পর্ক উন্নয়নের যে ভূমিকা নিয়েছেন তার জন্য বিশেষ করে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি)’ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে গাভি বোর্ডের চেয়ারপারসন ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা এ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। সম্প্রতি ইউনিসেফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ দেয়। এটার জন্যও প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। এ ছাড়াও কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘টেগর পিচ অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করে। এটা একটি বিরল সম্মাননা। এজন্যও অভিনন্দন জানানো হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যে উদ্ভাবনী নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন; এজন্য মন্ত্রিসভা তাকে অভিনন্দন জানায়।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক লন্ডনভিত্তিক স্বনামধন্য সংবাদপত্র ‘ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’ প্রকাশিত ২০১৯ সালে লন্ডনে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন; মন্ত্রিসভা এজন্য তাকেও অভিনন্দন জানায়।

এ ছাড়া বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৩১ হাজার ৫০০ পূজাম-পে এবার স্বস্তিতে নিরাপত্তার সঙ্গে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে, এজন্য মন্ত্রিসভা সন্তোষ প্রকাশ করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মের মতোই বাংলাদেশেও বর্জ্য উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে। পারমাণবিক জ্বালানির পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমিত রাখতে হবে।

ব্যবহৃত জ্বালানি অন্তত ১০ বছর সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা জ্বালানি উৎপাদনকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ জ্বালানি অ্যাসেমব্লি সিল করা বাক্সে সংরক্ষণসহ পরমাণু চুল্লির রিঅ্যাকটর কোরের পরিচালন সময়কালে যেকোনো সময় আনলোড করতে হবে এমন সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে ব্যবহৃত জ্বালানি সংরক্ষণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী গবেষণা চুল্লি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, চিকিৎসা শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা, প্রশিক্ষণ বা বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার হয়। আমরা যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করি, এগুলোর মধ্যেও সীমিত পরিসরে অ্যাটমিক এনার্জি ব্যবহার করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) আওতায় পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আইএইএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী এগুলো পরিচালিত হবে। অ্যাটমিক এনার্জি যেহেতু একটি স্পর্শকাতর ও বিপজ্জনক এনার্জি। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা গাইডলাইন দরকার। আইএইএ’র যে গাইডলাইন আছে সেটার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে অনুযায়ী এই নীতিমালাটা তৈরি করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।

রূপপুরে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার যে বর্জ্য তা চুক্তি অনুযায়ী সরাসরি রাশিয়া, এটা আমরা ডিসপোজ (ধ্বংস) করব না। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যেহেতু তাদের বিশাল দেশ, ডিসপোজালের অনেক জায়গা আছে, আমাদের সেরকম জায়গা নেই, আমাদের ঘণবসতিপূর্ণ জায়গা। চুক্তিতেই বলা হয়েছে, (পারমাণবিক বর্জ্য) তারা সিল করে নিয়ে যাবে এবং ওখানে নিয়ে ডিসপোজাল করবে।

‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল আইন’ অনুমোদন : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের খসড়াই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ আইনটি নতুন এবং ধারণাটাও নতুন অর্থাৎ, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে আমাদের কোনো গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ছিল না। কৃষিক্ষেত্রে বা শিল্পক্ষেত্রে থাকলেও প্রকৌশল গবেষণা ক্ষেত্রে নতুন আইন তৈরি করা হয়। আইনে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল’ নামে একটি কাউন্সিল থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ কাউন্সিলের কাজের মধ্যে জাতীয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকৌশল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ক্ষেত্র যেমন পূর্ত, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিকসহ সব ধরনের অবকাঠামো যন্ত্রপাতি মালামালের নকশা প্রণয়ন, উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করা।

কাউন্সিলের অ্যাপেক্স বডি হিসেবে গভর্নিং বডি থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বডির ব্যবস্থাপনার জন্য একজন চেয়ারম্যান এবং পুরকৌশলবিদ, যন্ত্রকৌশলবিদ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশলবিদ, প্রশাসন ও অর্থনীতিবিষয়ক এবং প্রকৌশল ও অন্যান্য শাখা থেকে একজন মিলে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রতিনিধি এবং সরকার মনোনীত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেসরকারি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি এবং যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধিসহ ১০ জনের কমিটি থাকবে।

প্রতি তিন মাসে গভর্নিং বডির একটি করে সভা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী চেয়ারম্যান এবং সচিবকে ভাইস চেয়ারম্যান করে একটি উপদেষ্টা পরিষদও থাকবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাতিঘর আইন অনুমোদন : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৮৭ সালের একটি পুরোনো আইন ‘দ্য লাইটহাউস অ্যাক্ট, ১৯৮৭’ আপডেট করে মোটামুটি একই রকমের আইন করা হয়েছে। এখানে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। ১৯৮৭ সালের প্রেক্ষাপটে ২০১৯ এ এসে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে।

আইনে নতুন কিছু সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্দর’ ও ‘বাতিঘর’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। যেমন- চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি বাতিঘর থাকবে। ‘বাতিঘর অঞ্চল’ বলতে সীমানাভুক্ত বাতিঘর এলাকা বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close