বদরুল আলম মজুমদার

  ১১ মে, ২০১৯

কাদের সিদ্দিকীর আলটিমেটামে ঐক্যফ্রন্টে টানাপড়েন

পার্টি পরিচালনায় হযবরল অবস্থার কারণে জোটের শরিকরা বড় দল হিসেবে বিএনপির ওপর খুব বিরক্ত, তাদের ওপর এখন আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই নির্বাচন পরবর্তী দল পরিচালনায় একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় দলগুলো এখন বিএনপির পাশ ছাড়তে চাচ্ছে। সেই অনাস্থা আর বিরক্তি থেকে বাদ পড়ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যতম শরিক কাদের সিদ্দিকীর ফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটামে সেখানেও শুরু হয়েছে নতুন করে টানাপড়েন।

গত বছরের নভেম্বরে সর্বশেষ শরিক হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া কাদের সিদ্দিকী গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে ফ্রন্ট ছাড়ার জন্য এক মাসের আল্টিমেটাম দেন। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পর কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সাতজনের শপথ নেওয়াকে কঠোর সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় কেন দুর্বলতা? সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া যাচ্ছে না? মোকাব্বির খানকে গেট আউট বলে কাউন্সিলে আবার তাকে পাশে বসিয়ে সভা করেন। এসব বিষয় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমরা আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী এক মাসের মধ্যে যে যে অসংগতি আছে তা সঠিকভাবে নিরসন করা না হলে ৮ জুন ঐক্যফ্রন্ট থেকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে। সময় বেঁধে দেওয়ার আগে জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে অসংগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী জানান, সবার সঙ্গেই তিনি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই নেতা বলেন, যারা শপথ নিয়েছেন তারা মীর জাফরের চেয়েও বেশি নিন্দিত হিসেবে বিবেচিত হবেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সঠিকভাবে চলতে পারেনি, চলেনি। নির্বাচনী সহিংসতার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের পাশে ঐক্যফ্রন্ট সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এছাড়া গত ৩০ এপ্রিল ফেনীর নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে জোটের একটি জমায়েত হওয়ার কথা ছিল তাও বাতিল হয়। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘তথাকথিত’ নির্বাচিতরা শপথ নিলেন কিন্তু বিএনপি মহাসচিব শপথ থেকে বিরত থাকলেন- এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

এদিকে, শরিকদের জোট ছাড়া ও ছেড়ে দেওয়ার হুমকির মুখে বিএনপি নিজ দলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আরো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে। এতে কোনো দল বা জোট যদি তাদের সঙ্গও ছেড়ে যেতে চায়, তাতে আপত্তি করবে না বিএনপি। এমনকি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম বৃহৎ শরীক, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র জামায়াতকেও ত্যাগ করার জন্য বিএনপি এখন প্রস্তুত। যদিও নেতারা জামায়াতের সঙ্গে আগেভাগে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাচ্ছেন না। তবে জামায়াত নিজে চলে গেলে আপত্তি করবে না বিএনপি। দলটি মনে করে ফ্রন্ট ও জোটভুক্ত কিছু দলের ভূমিকাতে বিএনপির রাজনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় কে জোট ছেড়ে গেল না গেল তা নিয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া দেখাবে না দলটি। তবে সব মিলিয়ে দলকে টিকিয়ে রাখাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কিছু দল বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সমন্বয়ক ড. আব্দুল মঈন খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কি কারণে কাদের সিদ্দিকী ক্ষুদ্ধ তা আমি এখনই বলতে পারব না। তবে আন্দালিব পার্থ ও কাদের সিদ্দিকীর ইস্যু সম্ভবত একই। তারা বলতে চাচ্ছেন আমরা কেন সংসদে গেলাম। বিএনপি ও গণফোরামের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে শিগগিরই একটি ব্যখ্যা আমরা দাঁড় করাতে পারব বলে মনে করি। কোন প্রেক্ষাপটে বিএনপি সংসদে গেল তা এরই মধ্যে অনেকের মাঝে ক্লিয়ার হলেও শরিক দলগুলোর কাছে পরিষ্কার হতে হয়তো আরো কিছু দিন সময় লাগবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, একাদশ নির্বাচনের পর বিএনপিকে নানামুখী সংকট ও বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নির্বাচিত ছয় এমপির মধ্যে জাহিদুর রহমান জাহিদ দলের নির্দেশনা না মেনেই শপথ গ্রহণ করার পর মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি চারজন এমপিকে হাইকমান্ড শপথ গ্রহণের অনুমতি দেয়। এরপরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা প্রকাশ্যেই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। সূত্র বলছে, শপথ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কী ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হয়েছে বিএনপিকে, তা শরিকদের অজানা থাকার কথা নয়। বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সংকটের বিষয়টিও শরিকরা জেনেও যদি শরিকরা ছেড়ে চলে যায়, সেক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে পুরো বিরোধী শিবিরে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা থেকে বের হতে আরো সময় লাগবে। এই মুহূর্তে যেসব দল বা ব্যক্তি জোট বা ফ্রন্ট ছেড়ে যাচ্ছে, তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেবে না বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, রাজনৈতিকভাবে বিরোধী শিবিরে এক ধরনের অস্থিরতা আছে। নির্বাচনের পর এটাই স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে পলিসি ঠিক করার আগে কেনো বিষয়েই মুখ খুলবে না বিএনপি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, যেকোনো বিষয়েই কিছু বলতে হলে আগে দলের পলিসি ঠিক করতে হয়। আমরা বসব। এরপর বলা যাবে ঠিক কী করব। আর চলে যায়, তারা যাওয়ার। এখানে পরিস্থিতি কী, তা সবাইকে বুঝতে হবে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘আগামী শনিবার (১১ মে) স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করতে পারেন। ওই বৈঠকে বিষয়গুলো উঠবে। এরপর বলা যাবে দলের দৃষ্টিভঙ্গি কী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close