গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা হতেই চলাচল শুরু করে মাটি ভর্তি লড়ি ও ড্রাম ট্রাক, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, উপজেলার মোক্তারপুর, বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, জামালপুর, বাহাদুরসাদী, নাগরী ও তুমলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি গুলো থেকে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ধরনের মাটি কাটা হলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে কয়েক গুণ। এসব মাটির যাচ্ছে ইটভাটা সহ অন্যান্য কাজে। এরই মধ্যে শতাধিক একর কৃষি জমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে, ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।

সরেজমিনে উপজেলার জামালপুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে ফসলি জমি থেকে প্রতিদিনই মাটি লুট করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে কোথাও ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এসব গর্তে পাশের কৃষি জমির মাটিও ভেঙে পড়ছে। কোনো জমির মালিক টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অধিকাংশ কৃষক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছেন।

উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, মালিবন্দের কয়েকটি স্থানে একাধিক ভেকু সন্ধ্যা থেকে সারারাত কাটা হয় কৃষি জমির মাটি। তবে এ কাজের জন্য এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে তাদের নিয়োগ করা লোক পাহারা দেয়। প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালালে তাদের ওই পাহারায় থাকা লোকেরা খবর দিয়ে দেয়। খবর পেয়ে তারা সব কিছু রেখে তারা পালিয়ে যায়।

উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পূর্ব জামালপুর ও বালুয়াভিটা এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। রাতের আঁধারে মাটি কাটার কয়েকটি চক্র কৃষি জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষি জমির মাটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির ওই উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম ইমাম রাজী টুলু জানান, আমি মাত্র কয়েক দিন হয় এ উপজেলায় যোগদান করেছি। গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর ইউনিয়নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করি। এ সময় কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন ও বিপনন বন্ধ করি। অভিযানে ৫টি ভেকু ও ৫টি লড়ির ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে।