বদরুল আলম মজুমদার

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

কাদেরের জায়গায় রওশন

জাপায় আবারও এরশাদের নাটক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনীতি মানেই যেন নাটকীয়তা। জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসেও নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে চলেছেন তিনি। দলটির নেতারা যখন এরশাদের ৯০তম জন্মদিন পালন নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই আপন ভাই জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে আবারও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন। এর আগে দুই দফায় এরশাদ কো-চেয়ারম্যান পদের মর্যাদা নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নিজের সিদ্ধান্ত বদল করলেন এরশাদ।

এর আগে প্রথম যখন এরশাদ দলে কো-চেয়ারম্যানের দুটি পদ সৃষ্টি করেন। তখন রওশন এরশাদকে প্রথম কো-চেয়ারম্যান করা নিয়ে বির্তকের জন্ম দিয়েছিলেন। রংপুরসহ নিজের ভাই-ভাতিজাদের প্রতিবাদের মুখে জি এম কাদেরকে

দলের প্রথম কো-চেয়ারম্যান করেন। মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির ভাবি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে এক ধরনের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন জি এম কাদেরকে দেওয়া চিঠিতে। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই আবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেন। গতকাল দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এরশাদ জানান, জি এম কাদেরকে যে পদ থেকে সরানো হয়েছে সেখানে রওশনকে পদায়ন করা হলো। এখন থেকে সংসদীয় উপনেতা পদে দায়িত্বও পালন করবেন রওশন।

দলের একাধিক সূত্র জানায়, সাংগঠনিক দক্ষতার অভাবে দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা জি এম কাদেরের ওপর রুষ্ট ছিলেন। তবুও তাকে বাদ দেওয়ার জন্য তেমন চাপ দেওয়া হয়নি। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম মহাসচিব দিয়ে চালালেও জি এম কাদের কোনো ফ্যাক্টর ছিলেন না। তাই হঠাৎ করে জি এম কাদেরকে বাদ দেওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে ব্যাপক জল্পনা। জি এম কাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ‘বাইরে থেকে’ এরশাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা বলেই মনে করছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, সরকারের সুনজরে থাকা জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী একজনকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বানাতেই বলি দেওয়া হয়েছে জি এম কাদেরকে। তবে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত দলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না বলেও মত অনেকের।

তাকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে জি এম কাদের প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি জানিনা কেন আমাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। গত পরশু দিন বিকেলেও আমি ওনার (এরশাদ) সঙ্গে কথা বলেছি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন এ বিষয়ে তিনি আমাকে কিছুই বলেননি। আমি ঘটনাটি জেনে বিস্তারিত কথা বলব। তবে এটুকু বলতে পারি আমাকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক।

জাতীয় পার্টির এক প্রভাবশালী নেতা এ ব্যাপারে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, জি এম কাদেরকে কী কারণে সরানো হয়েছে তা চিঠিতেই বলা আছে। তিনি বলেন, দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের উপনেতা পদে রওশনকে বসাতেই মূলত এরশাদ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে দলের পুরনো সেই বিরোধ আবারও নতুন করে দেখা দিয়েছে। গত সংসদ থেকেই দলে রওশনপন্থি ও এরশাদপন্থি নামে দুটি ধারা তৈরি হয়েছিল। সেখানে সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনজন মন্ত্রী থাকলেও তারা কেউই এবার সরকারে নেই। এবারের সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলেও সেই এমপিরা সরকারের সুবিধা নিতে রওশনকে সামনে চান। এমপিরা রওশনকে অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারলেও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতা রেখে তা সম্ভব ছিল না। তাই পার্টির এমপিরা এরশাদের ওপর এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন কাদেরকে সরিয়ে দিতে। তাছাড়া এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিকে রওশনের নেতৃত্বে রাখতে দলের একটি প্রভাবশালী পক্ষ কাজ করে আসছে। সেখানে সরকারেরও সবুজ সংকেত ছিল।

এদিকে গত শুক্রবার রাতে পাঠানো এরশাদের সাংগঠনিক নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘আমি এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমার অবর্তমানে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমি এটাও আশা করেছিলাম, পার্টির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। কিন্তু পার্টির বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করলাম। জি এম কাদের পার্টির পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে এবং পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। পার্টির সিনিয়র নেতারাও তার নেতৃত্বে সংগঠন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’ এতে আরো বলা হয়, এ অবস্থায় সংগঠনের স্বার্থে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব এবং কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবে তিনি পার্টির প্রেসিডিয়াম পদে বহাল থাকবেন। তিনি সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার পদে থাকতে পারবেন কিনা, তা জাতীয় পার্টির সংসদীয় কমিটি নির্ধারণ করবে।

তবে দলের সংসদীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও গতকাল দেওয়া একটি চিঠির মাধ্যমে এরশাদ জানান, আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অপসারণ করছি। এখন প্রধান বিরোধী দলের উপনেতার পদে বেগম রওশন এরশাদকে মনোনীত করা হলো। পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণে সংসদের স্পিকারের সমীপে প্রস্তাব পেশ করা হলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close