নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ অক্টোবর, ২০১৮

রায় ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা আজ বুধবার। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় জাতি। ২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে জঘন্যতম এই হামলা করা হয়। এতে আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণার দিন আজ, এ কারণে নাশকতার আশঙ্কায় রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে রায়কে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ যদি নাশকতার চেষ্টা করে তাদের দমনের জন্য প্রস্তুত আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আজ কতিপয় চিহ্নিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে মামলার রায় দেওয়া হবে। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে ঘৃণ্য গ্রেনেড হামলা চালিয়ে দলটিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল ওরা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ওই অপরাধীদের বাঁচাতে কেউই রাস্তায় আসবে না। এ মামলার রায়ের মাধ্যমে জাতি আরো একটি কলঙ্কমুক্ত হবে। গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে কোনো নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না।

একইভাবে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, এ রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাজনিত কোনো হুমকি নেই এবং নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা আদালতের একটা স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। তবে রায়কে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতার চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কোনো অপতৎপরতা বরদাশত করা হবে না।

এদিকে, রায় ঘোষণার দিন আসামি ও ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতের চারপাশের সড়কে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতে তল্লাশি চলবে, বসানো হবে চেকপোস্ট। এ ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। শহরজুড়ে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। সব মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ সহস্রাধিক সদস্য এই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, রায় ঘোষণার দিন কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার কোনো হুমকি নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ও চেকপোস্ট থাকবে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই মামলার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা জড়িত সে কারণে নয়াপল্টনসহ বিএনপি অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে। রায়ের পর কেউ যাতে সড়কে নেমে যান চলাচলে বিঘœ না ঘটাতে পারে, নাশকতা করতে না পারে সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। নাশকতা হতে পারে এমন সম্ভাব্য স্পটগুলোতে আগে থেকেই পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী র‌্যাবের ব্যাটালিয়নগুলোকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

এদিকে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় ১ নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।

২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন এবং জামিনে ছিলেন ৮ জন। জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামেও সতর্কতা : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ঘটনার দুই মামলার রায় ঘোষণার দিন চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের নাশকতা কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রায় ঘিরে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য নগরী ও জেলায় মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, মামলার রায় কেন্দ্র করে যদি কেউ বা কোনো গোষ্ঠী নাশকতা, অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তাহলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় আজ বুধবার বিএনপিকে সমাবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close