এম এ রউফ, সিলেট
সিসিক নির্বাচন
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে এখেেনা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তফসিল অনুসারে, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করবেন। তার আগেই প্রচারণা শুরু করেছেন মেয়র এবং কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। কিন্তু এই আচরণবিধি মানছেন না কেউই। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আছেন প্রথম সারিতে। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনি প্রচার শুরু করিতে পারিবেন না।’ আগামী ১০ জুলাই সিলেটে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে প্রার্থীদের।
গত ১৩ জুন সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোরেশোরে নামেন মাঠে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ওই সময় থেকেই নগরীতে গণসংযোগ শুরু করেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে তার দল মনোনয়ন দেয়। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পান। অন্যদিকে, সিলেট মহানগর জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দলীয় সমর্থনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ আরো পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। এদের কেউই আচরণবিধি মানছেন না।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রীতিমতো শোডাউন করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন। অথচ আইনে বলা হয়েছে, পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান এবং বিএনপির প্রার্থী আরিফ বলেন, ‘যেসব নেতাকর্মী এসেছেন, তারা আমাদের সঙ্গে আসেননি।’ সেদিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামানও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি ‘দেখেননি’ বলে মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা ও বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। ‘কুশল বিনিময়ের’ আড়ালে ভোট প্রার্থনা করছেন। এ ছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম, জামায়াতের প্রার্থী জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, সিপিবি-বাসদের প্রার্থী আবু জাফরসহ অন্য মেয়র প্রার্থীরাও বিধি লঙ্ঘন করে নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আছেন মাঠে। তারা প্রতীক না পেলেও নিজ নিজ ওয়ার্ডের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘আগে যেভাবে নগরবাসীর খোঁজখরব নিতাম, এখনো সেভাবেই নিচ্ছি। আমি কোনো এলাকায় গেলে মানুষ ভিড় করে। এটাকে নির্বাচনী প্রচারণা বলা যাবে না।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। প্রতীক পাওয়ার পরই প্রচারণা শুরু করব। এর আগে প্রচারণায় নামার প্রশ্নই ওঠে না।’
প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত সোমবার কামরানের বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দিয়েছেন আরিফ। পরদিন মঙ্গলবার ইসিতে একই অভিযোগ আরিফের বিরুদ্ধে করেছেন কামরান। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জামায়াতের প্রার্থী জুবায়েরকে মঙ্গলবার শোকজ করেছে ইসি। এই প্রথম আচরণবিধি বিষয়ে ইসির তৎপরতা দেখা গেল।
"