আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রোহিঙ্গা নিধনের আলামত নিশ্চিহ্ন করছে মিয়ানমার

সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি ইইউর

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের আলামত নিশ্চিহ্ন করতে অর্ধ শতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। গতকাল শুক্রবার এই বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এছাড়া রোহিঙ্গা নিপীড়নে দায়ী মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। যেসব সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আনা হবে তাদের নামের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধানকে আগামী সপ্তাহেই অনুরোধ জানানো হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। অপরাধের আলামতের সুরক্ষায় অবিলম্বে বুলডোজারের ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। ‘দ্য আরাকান প্রজেক্ট’ নামে সে দেশের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা কদিন আগে একই অভিযোগ তুলেছিল। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই অবস্থাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে আলামত নষ্টের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলো।

মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধ্বংসযজ্ঞের নতুন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে জানানো হয়, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জনশূন্য ৫৫টি গ্রামের সব স্থাপনা ও ফসলাদি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গ্রামগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি পূর্বে অক্ষত ছিল বলেও দাবি করা হয় এতে। এছাড়া গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সাড়ে ৩ শ ’রও বেশি গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার কথাও জানানো হয়। বলা হয়, বুলডোজারে গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে একইসঙ্গে অপরাধকর্মের স্মৃতি ও আইনি আলামত ধ্বংস হয়ে যাবে।

এইচআরডবিøউ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, গুঁড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এগুলো সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, ‘সংরক্ষিত আলামত জাতিসংঘের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদেরকে সেই সময়ের অপরাধকর্মগুলো যথাযথভাবে নথিবদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য। এর মধ্য দিয়েই কেবল দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব।’ এভাবে অপরাধের আলামত ধ্বংসের প্রচেষ্টাকে ন্যায় বিচারের পথে বাধা আখ্যা দেন তিনি।

এদিকে, ইইউর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় অতি দ্রুত সেসব প্রস্তাব সামনে আনতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান মোঘেরিনিকে আহবান জানাবেন ইউরোপীয় দেশগুলোর মন্ত্রীরা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনায় নতুন করে মিয়ানমার জেনারেলদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি বা তাদের সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা হবে মিয়ানমারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোরতম পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা অনেক আগেই মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। নব্বইয়ের দশক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো জারি রয়েছে। কিভাবে তা আরো জোরদার করা যায় সে বিষয়ে সোমবার মোঘেরিনি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র দফতরকে আহŸান জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

আগামী সোমবার ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের স্বাভাবিক বৈঠকের পর এ বিষয়ে একটি বিবৃতি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ওই বিবৃতিতেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরের ১২ তারিখে গ্রেফতার হওয়া রয়টার্সের দুই সাংবাদিকে মুক্তি দেওয়ার আহবান জানানো হতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist