মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

আরো দৃশ্যমান হচ্ছে পদ্মা সেতু

দ্বিতীয় স্প্যান উঠার অপেক্ষায়

পুরোদমে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। আরো ভালোভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের এই বহুমুখী সেতু। এবার পদ্মা সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর বসতে যাচ্ছে দ্বিতীয় স্প্যান ৭বি। আজ শনিবার মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে এটি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশে রওনা দেবে। গন্তব্যে পৌঁছাতে স্প্যানটির তিন দিন সময় লাগবে। আশা করা যায়, আগামী মঙ্গলবার পিলারের বিয়ারিংয়ের ওপর স্প্যানটি বসানো যাবে। এর আগে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর বসানো হয়েছে প্রথম স্প্যানটি। ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে টেনে আনা স্প্যানটি বসানো হয় সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হয়।

গত বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। গেল বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর পর চোখের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ায় পদ্মা সেতু। ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান বসাতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান বসানোর পর প্রতি মাসে একটি করে স্প্যান ওঠানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছিলেন পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি।

পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেনে করে ধূসর রঙে রাঙানো স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হবে। নিজস্ব চ্যানেল ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট ব্যবহার করে জাজিরা প্রান্তের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলার এলাকায় নিয়ে রাখা হবে স্প্যানটি।

অনুকূল আবহাওয়া থাকলে আগামীকাল রোববার বিকেলে স্প্যান বসবে। কোনো কারণে যদি ওইদিন স্প্যানটি না বসানো যায়, পরদিন সকালে বসানোর বিষয়ে আশাবাদী প্রকৌশলীরা।

পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর বসানো হবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি। এদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট দিয়ে স্প্যান নেওয়ার কারণে ওই রুটে ফেরিসহ সব নৌযান বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাট উপমহাব্যবস্থাপক মো. খালেদ নেওয়াজ।

তিনি জানান, পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান যেহেতু এই নৌরুটে নেওয়া হবে, তাই পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। এরই মধ্যে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের সব কাজ শেষ হয়েছে। ৩৯ নম্বর পিলারে কংক্রিট ঢালাইয়ের আগে ৩ ধাপে পাইল ক্যাপ কংক্রিটিং করা হয়েছে। শেষ ধাপের কংক্রিটিংয়ের আগে পিয়ার কলামের রড প্রবেশ করানো হয়েছে। এরপর বাইন্ডার রড দিয়ে বেঁধে উপযোগী করে তোলা হয়।

বাইন্ডার রড সেটাপ শেষে সাটার সেটাপ করা হয়। এর আগে সাটারের ভেতরে রিলিজিং এজেন্ট লাগানো হয়। আনুষঙ্গিক কিছু ফরম ভাইব্রেটর মেশিন সেট করা হয় তার সঙ্গে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে পিন্থ ঢালাই করা হয়। এ ছাড়া বেয়ারিং বসানো হয়েছে পিলার দুটিতে; যা সেতুর ভূকম্পনরোধ এবং সেতুর ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করবে। ৩৮ নম্বর পিলারটি আগে থেকেই প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিখুঁতভাবে পিলার দুটিতে স্প্যান বসানোর উপযোগী কি না যাচাই-বাছাই করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘মূল সেতুর কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। পদ্মা নদী আমাজানের মতো একটি নদী, একেবারে অনিশ্চিত একটি নদী। নির্দিষ্ট তারিখ দিয়েও আমরা সেই নির্ধারিত সময় রাখতে পারি না। দ্বিতীয় স্প্যান বসাতে আমাদের আরেকটু সময় লাগবে, তা মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত গড়াতে পারে। পদ্মার নিচের অনিশ্চিত পরিস্থিতি, গভীরতা ইত্যাদি মিলিয়ে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা আছে। আমাদের টার্গেট, আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করব।’

এদিকে গত বুধবার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার। ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist