নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮

হকার ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ রণক্ষেত্র

মেয়র আইভীসহ আহত অর্ধশতাধিক

ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মিছিল থেকে গুলি করার ঘটনায় উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে শহরের চাষাঢ়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বেশ কয়েক দিন ধরেই ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেয়র আইভীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাক্য বিনিময় হচ্ছিল। গত সোমবার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ফুটপাতে হকার বসানোর ঘোষণা দেন। আর তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেন মেয়র আইভী। এরই জেরে এই সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে মেয়র আইভী ও ৫ সাংবাদিকসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল প্রধান, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, যমুনা টেলিভিশনের স্মিথ, ফটোসাংবাদিক তাপস, মেয়রের পিএ আবুল হোসেন, মেয়রের দেহরক্ষী পুলিশ শফিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের সময়ে উভয়পক্ষের মিছিল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিতে মেয়র আইভী সড়কে পড়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। সেখান থেকে আইভী সমর্থকরা মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকেন। অপরদিকে শামীম ওসমানের সমর্থক হকাররা চাষাঢ়া শহীদ মিনার চত্ব্রে অবস্থান নেন। আইভীর মিছিলটি বঙ্গবন্ধু সড়কের সায়েম প্লাজার সামনে এলে শামীম সমর্থক ও হকাররা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা চাষাঢ়া এলাকা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল, ফাঁকা গুলি করে। সংঘর্ষের সময় পুরো নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জের সব মার্কেট ও সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

পরে আহত মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘শামীম ওসমানের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমার নিরস্ত্র নিরীহ কর্মীদের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও গুলিবর্ষণ করেছে। আমি শান্তিপূর্ণভাবে বিকেল ৪টায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসতেছিলাম। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসা মাত্র শামীম ওসমানের ক্যাডার নিয়াজুল পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করে। আমার নেতাকর্মীরা মার খেয়ে আহত হয়ে এক ঘণ্টার মতো আমাকে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে ঘিরে রাখলেও পুলিশ সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। তাহলে পুলিশ প্রশাসন কি চেয়েছে, আমাকে হত্যা করা হোক। তারপর আমার লাশ পৌঁছে দেবে?’ এ ছাড়া মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করে বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব। কেন আমার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর এভাবে হামলা চালানো হলো। গুলি করা হলো। আহত করা হলো অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। শান্তিপ্রিয় নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করে তুলল শামীম ওসমান। কেন? আমি তো চুপ ছিলাম। কোনো কথা বলিনি। হকারদের মার্কেট করে দিয়েছি। বিকল্প পথ দেখিয়েছি। প্রয়োজনে হকার্স মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন করে সেখানে হকার পুনর্বাসন করা হবে।’

অপরদিকে সংঘর্ষ শেষে শামীম ওসমান বঙ্গবন্ধু সড়কে তার সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে চাষাঢ়ার সমবায় সুপার মার্কেটের সামনে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে কারা এ হামলা করেছে তা আমরা জানি, কোনো একটি পক্ষ আমাদের দুর্নাম করতে এ সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে। তোমরা এ ফাঁদে পা দিও না, শান্ত থাকো। সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist