হোসাইন মুবারক

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৭

সময়ের অর্থকথা

শিল্পপণ্যের মেলা ও সিআইপিরা

দেশীয় আয়োজনে আন্তর্জাতিক মেলা বহির্বির্শ্বে পণ্যের পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করে। ক্রেতা, উৎপাদক ও আমদানিকারকদের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এক কথায়, পণ্যের অগ্রগতির আরেক নাম মেলা।

পণ্য উৎপাদনে যেসব উপাদান থাকে, মেলায় সেসব উপাদানের পৃথক পৃথক স্টল থাকে। এতে উৎপাদিত পণ্যের মানগত ও সমন্বিত পরিচিতি স্পষ্ট হয়। আমদানিকারকরা পণ্যের গভীরে গিয়ে ভাববার সুযোগ পান। আর এটা একমাত্র মেলার মাধমে সম্ভব।

এ সপ্তাহে দুটি শিল্পপণ্যের মেলা আয়োজনের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চামড়া ও সিরামিক শিল্প নিয়ে ছিল এ প্রদর্শনী দুটি। দুটো আয়োজনই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। বিভিন্ন দেশ এসব আয়োজনে অংশ নেয়। এছাড়া রফতানিমুখী শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও এ সপ্তাহে ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব আয়োজনে রফতানিমুখী শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

১.

চামড়াশিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

চামড়াশিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অনন্য খাত। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছে। এ শিল্পকে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হরিণধরায় বিশেষ শিল্প নগরীতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতিতে এ শিল্পের গুরুত্বের কারণে আলাদা এই শিল্প নগরী তৈরি করা হয়েছে।

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বৃহস্পতিবার শুরু হয় তিন দিনব্যাপী লেদার ট্রেড শো ‘লেদারটেক বাংলাদেশ-২০১৭’। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি হোটেলে আয়োজক সংস্থা আসক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেড সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কোয়েলের হেড অব অপারেশন্স রওশন আরা উপস্থিত ছিলেন।

১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলে। এটি এ আয়োজনের পঞ্চম আসর। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিনামূল্যে প্রদর্শনী উন্মুক্ত ছিল। প্রদর্শনীতে ১৫টি দেশের ২৫০টি প্রতিষ্ঠান লেদার, ম্যানুফ্যাকচারিং ফুটওয়্যার, চামড়াজাত পণ্যসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি উপস্থাপন করা হয়। যেসব দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, ভারত, চীন, কোরিয়া, তুরস্ক, মিসর, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান ও হংকং। ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় চামড়া খাত। তাই এ ট্রেড শো চামড়া খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও পরিসর বাড়াতে সহায়তা করে।

চামড়া শিল্পকে বলা যায়, পুরো রফতানিমুখী। দেশের ন্যূনতম মাত্রার চাহিদা মিটিয়ে এর উল্লেখযোগ্য অংশ বহির্বিশে^ রফতানি করা হয়। এ খাত থেকে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে আনে সমৃদ্ধির আলো।

২.

আসছে সিরামিক পণ্যের মেলা

দেশে তৈরি চীনামাটির অতি উন্নতমানের পণ্য বিদেশের বাজারে মানের প্রশ্নে স্বাতন্ত্র্য স্থান তৈরি করে নিয়েছে। সে এক পুরনো কথা। বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য বিশ^বাজারে অনেক দেশের পণ্যের মাঝে ভিন্ন পরিচিতি পেয়েছে। দেশকে দাঁড় করিয়েছে উন্নত শিল্পপণ্য তৈরিকারী দেশের কাতারে। সিরামিক পণ্যের জন্যও বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বাজারে সুখ্যাতির সীমানায় পৌঁছে গেছে। সেই শিল্পপণ্যকে নিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর শুরু হবে সিরামিক পণ্যের মেলা ‘সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশ-২০১৭’। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরতœ মিলনায়তনে হবে তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক মেলা। রাজধানীর একটি হোটেলে মেলার আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, ফার সিরামিকের পরিচালক ইরফান উদ্দিনসহ সংঠনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দেশে এখন দ্রুত বর্ধনশীল একটি খাত সিরামিক। তিনি বলেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশে সিরামিকের প্রতিষ্ঠান ছিল ২২টি; আমদানি চাহিদার কারণে এখন যার সংখ্যা ৬০টিরও বেশি। আরো ২০টি প্রতিষ্ঠান এখন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় আছে। মেলায় দেশীয় সব সিরামিক কোম্পানির বাইরে সিরামিকের কাঁচামাল, মেশিনারিজ, প্রযুক্তি সহায়তাকারী বিদেশি কোম্পানি অংশ নেবে। দেশি কোম্পানির ১৩টি ও বিদেশি থাকবে ৬৫টি স্টল। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। সবার জন্য এ মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

সিরামিক পণ্যের এ মেলা আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পণ্য পরিচিতি আরো ঘনিষ্ঠ করবে। এ ধরনের আয়োজন দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করে। আমদানিকারক, রফতানিকারক ও ক্রেতা সাধারণের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি করে। পণ্যের পরিচিতিকে আরো ঘনিষ্ঠ করে। এতে দেশ পায় গতিমান অর্থনীতি।

৩.

সিআইপি হলেন ১৬৪ ব্যবসায়ী

ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৬৪ ব্যবসায়ীর হাতে সিআইপি কার্ড তুলে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। রোববার রাতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নির্বাচিতদের হাতে এই কার্ড তুলে দেন। ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে অবদানের জন্য এদের এ কার্ড দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই বছর ১৬টি পণ্য খাতে ১৩১ রফতানিকারক এবং পদাধিকার বলে ৩৩ ব্যবসায়ী নেতাকে সিআইপি হিসেবে নির্বাচিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

দেশে পোশাকশিল্প রফতানিমুখী অর্থনীতির অন্যতম খ্যাত। এ খাতের পরিধি যেমন বড়, তেমনি এ খাতে সিআইপিও ঘোষণা করা হয়েছে তুলনামূলক বেশি।

তৈরি পোশাক খাতে ওভেন ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন এ কে আজাদ, আবদুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান মৃধা, শরীফ জহীর, আরশাদ জামাল, আলী আজিম খান, মুজিবুর রহমান, মেজবাহউদ্দিন খান, আজিজুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম খান, কাজী এএফএম জয়নুল আবেদিন, ফেরদৌস পারভেজ বিভন, ইতেমাদ উদ দৌলাহ, ওয়াসিম রহমান ও তানভীর আহমেদ।

নিট ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন গোলাম মোস্তফা, স্যামুয়েল এস চৌধুরী, নাফিস সিকদার, গাওহার সিরাজ জামিল, মাসুদুজ্জামান, অমল পোদ্দার, নাজীম উদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান, আসাদুল ইসলাম, মহিউদ্দিন ফারুকী, নাবিল উদ দৌলাহ, জয়নাল আবেদীন মোল্লা, রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন, আসিফ আশরাফ, আসিফ মঈন, আবদুস সোবহান, আবদুল কাদির মোল্লা, আসিফ ইব্রাহিম, মশিউর রহমান চমক, এমএ সবুর, এফএম কবির মহিউদ্দিন, নাসির উদ্দিন, প্রীতি পোদ্দার, সাফিনা রহমান, নুরুল আলম চৌধুরী ও অঞ্জন শেখর দাশ।

কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। এ খাতে অন্য সিআইপিরা হলেন- স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, মোহাম্মদ মনসুর, গোবিন্দ চন্দ্র সাহা, গকুল চন্দ্র সাহা, শেখ আবদুল কাদের, রফিকুল ইসলাম লিটন ও আবদুল মোতালেব।

ওষুধশিল্প খাতে আবদুল মুক্তাদির, হস্তশিল্পজাত পণ্যে সফিকুল আলম সেলিম, বার্থা গীতি বাড়ৈ ও গোলাম আহসান সিআইপি হয়েছেন। সিরামিকে বিলাল মামুন ও আহমেদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী এবং প্লাস্টিক পণ্যে জসিম উদ্দিন ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেডের পরিচালক রবীন্দ্রনাথ পাল সিআইপি হয়েছেন।

এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, ওষুধসহ আরো কয়েকটি খাতে অবদানের জন্য বেশ কয়েকজনকে সিআইপি কার্ড দেওয়া হয়।

সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো রফতানি পণ্যের গতিধারা নিরীক্ষণ, তালিকা তৈরিসহ রফতানি পণ্যে যাবতীয় সহায়তা করে থাকে। রফতানি মেলার আয়োজনেও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সহায়ক হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রতিবছর কী পরিমাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কোন ব্যক্তি রফতানি করছেন; তাদের যাবতীয় পরিসংখ্যান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সংরক্ষণ করে। সেই পরিসংখ্যান থেকে প্রতিবছর সিআইপি নির্বাচন করা হয়।

রফতানিমুখী পণ্য আন্তর্জাতিক বলয়ে দেশ ও দেশের পণ্য প্রস্তুতকারকদের সুপরিচিতি বৃদ্ধি করে। আর মেলার আয়োজন এ পরিচিতিকে আরো কয়েক ধাপ সামনে নিয়ে যায়। তাই বিভিন্ন রফতানিমুখী পণ্যের বার্ষিক মেলার আয়োজন পণ্যের প্রসারতার আরো অগ্রগতিসাধন করে। সেই সঙ্গে রফতানি পণ্যের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা শিল্প উদ্যোক্তদের মনে আরো উদ্যম বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় অর্থনীতির ধেয়ে চলে সামনে। এমন মেলার আয়োজন ও সিআইপি ঘোষণা প্রতিবছর ফিরে ফিরে আসুক অর্থনৈতিক অঙ্গনে-এ প্রত্যাশা দেশবাসীর।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist