এস এম মুকুল

  ২০ অক্টোবর, ২০১৭

ভালোমন্দ

সমকালের কড়চা

আশ্বাসে বিশ্বাস : শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ভাঙিয়ে ফোন দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারকচক্র। কখনো মন্ত্রণালয়, দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা কিংবা তার আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসার নামেও অর্থ চাওয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা বোর্ড, জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসকে কেন্দ্র করে চলছে এই প্রতারকচক্রের কার্যক্রম। জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, এমপিওভুক্তি নিশ্চিত হবে-এমন আশ্বাস দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ফোনে অর্থ চাওয়া হয়। আশ্বাসে বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার একাধিক অভিযোগ এসেছে মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, কেউ যদি জাতীয়করণের নামে অর্থ দেয়, এ খবরের সত্যতা পেলে তার প্রতিষ্ঠান সবার আগে বাদ পড়বে!

মন্তব্য : এ কথা সর্বজনে জানেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তাই এতে কোনো টাকা-পয়সার প্রয়োজন নেই, এমনকি শিক্ষক সমাজ অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আশ্বাসের বিশ্বাসে প্রতারিত হয়ে নিঃশেষ হওয়া প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দিতে মন্ত্রণালয় যতটা হুশিয়ারি বার্তা দিল, অপরপক্ষে যারা প্রতারণার ফাঁদ পেতে অর্থ আদায় করছেন তাদেরকে কেন খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে না-ব্যাপারটি বোধগম্য নয়। তার পরও প্রতারকদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র/নোটিস জারি এবং প্রচারণা চালানো দরকার। অনলাইনভিত্তিক অথবা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা ও দ্রুত শাস্তি প্রদান করলে এমন প্রবণতা কমতে পারে।

স্থূলতার দ্বৈত বোঝা : বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘ওয়ার্ল্ড ওবিসিটি ডে’ উপলক্ষে গবেষণা নিয়ে যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় স্থূলতা বাড়ছে, বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ায় তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বলে দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা। অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে স্থূলতা বাড়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে। পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের তথ্য নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় ১৯৭৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিশু, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) তুলনা করে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতার চিত্র তুলে আনা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ যৌথভাবে ওই গবেষণা কার্যক্রম চালায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ছেলেদের মধ্যে স্থূলতার হার ছিল ৩ শতাংশ; যা ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর মেয়েদের মধ্যে স্থূলতার হার চার দশক আগের শূন্য থেকে বেড়ে হয়েছে শতকরা ২ দশমিক ৩ ভাগ। স্থূলতা বাড়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, খাবারের বিপণন এবং সরকারের খাদ্যনীতিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। অপুষ্টির কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বিশ্বের যেসব দেশে বেশি, দীর্ঘদিন ধরেই সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকে প্রথম দিকে। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে হয়তো এখন অপুষ্টি ও স্থূলতার ‘দ্বৈত বোঝা’ একসঙ্গে বহন করতে হবে।

মন্তÍব্য : এখনই সতর্ক হয়ে বিষয়টি আমলে না নিলে এই পরিণতি খুবই ভয়ংকর হতে পারে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য। স্থূলকায় শিশু-কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা যে বাড়ছে তা সহসাই দৃশ্যমান হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ‘স্থ’ূলতামুক্ত জীবন গঠনে একটি জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম’ হাতে নিতে পারে। এই কার্যক্রমের আওতায় বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণ, সেবা প্রদান ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। স্থূলকায় মুক্ত জীবনের জন্য সবার আগে মায়েদের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। স্থূলতার কারণে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যগত কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কিভাবে স্থূলমুক্ত থাকা যায়-এসব বিষয়ে চিকিৎসক, নিউট্রেশনবিদদের পরামর্শ-প্রচারণা দরকার। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের শারীরিক কসরত বাড়ানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পিতা-মাতার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। চীন বা জাপানের মতো শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, বাগান করা ও স্কুলটিফিন নিজেরা তৈরি ও সার্ভ করার কাজ করানো যেতে পারে।

পদ্মার চরে সোলার পার্ক : পদ্মার চরের অনাবাদি জমিতে ২০০ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে সোলার পার্কটি স্থাপন করবে সরকারের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল)। প্রতি মাসে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারের ঘরে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি চলমান রয়েছে। অনেক আবাদি জমির ধারে ঘর বানিয়ে প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুতে সেচকাজও চলছে। সব মিলিয়ে সৌরবিদ্যুতে যে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে সরকার।

মন্তব্য : সোলার পার্ক স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ। আমরা জানি, বাংলাদেশের জনপ্রতি এনার্জি ব্যবহারের হার ঘণ্টায় প্রায় ১৩৬ কিলোওয়াট। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস। যেখানে পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি নেই, সেখানে ঘরের চালার বা ছাদে প্যানেল স্থাপন করে সূর্যের আলো ধরে রাখার মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার হতে পারে আশার আলো। সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়াতে পারলে টেকসই সুফল পাওয়া যাবে।

ভ্যাট কেন আটকা : মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় সরকারের বিশাল অঙ্কের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আটকে রয়েছে। ৩০ প্রতিষ্ঠানের কাছে রাজস্ব দাবি করা হলে মামলা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজস্ব আটকে রাখার কৌশল নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এলটিইউ-ভ্যাটের হিসাবে ৩০ প্রতিষ্ঠানের কাছে মামলায় আটকে থাকা ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার মধ্যে ২৩৯টি মামলা হাইকোর্টের রিট জুরিসডিকশনে রয়েছে। এসব মামলায় এনবিআরের ভ্যাটের পরিমাণ ১০ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। হাইকোর্টের আপিল জুরিসডিকশনে ৪৬ মামলায় দাবিকৃত ভ্যাট ১৫৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া দাবীকৃত ভ্যাটের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা আর এনবিআরের আওতাধীন ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে রয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বড় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই মামলায় আটকে রয়েছে ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট। এর বাইরে আয়কর ও শুল্ক-সংক্রান্ত মামলায় আটকে রয়েছে আরো বিশাল অঙ্কের রাজস্ব। জানা গেছে, এসব কারণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যাচ্ছে না; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর।

মন্তব্য : এসব বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন যন্ত্রের অদক্ষতা, অক্ষমতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে মন্তব্য করতেও লজ্জা লাগে। গরিবের পকেট কাটতে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য, পরিবহন, বিদ্যুৎ, গ্যাস-এসবের দাম বাড়াতে সময় নিতে হয় না। বাছবিচার বা অনুসন্ধান করা অথবা জবাবদিহিতার দরকার পড়ে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বড় বড় কোম্পানি বা সংস্থার কাছে হাজার কোটি টাকা ভ্যাট বকেয়া রেখে খেলাপিদের কৌশলের কাছে হার মানতে লজ্জাবোধ বা বিবেকের দায়ে দংশিত হয় না নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তথা প্রশাসনযন্ত্র। দেশের করপোরেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছ থেকে যেভাবে ভ্যাট আদায় করে সেভাবে সরকারকে যদি ভ্যাট প্রদান করত; তাহলে এ দেশের সরকার বেকার-ভাতা দিতে পারত নতুবা কর্মসংস্থান বাড়াতে পারত। সাধারণ জনগণ তেল-সাবান কিনতেও ঠিকই ভ্যাট দিচ্ছে। কারণ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট সংযুক্ত করে দাম নিচ্ছে। কিন্তু সরকারকে সেই ভ্যাটে তারাই ফাঁকি দিচ্ছে। তবে ভ্যাট আদায়কারী অসাধু কর্মকর্তারাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় সরকারের ভ্যাট আদায় কম হচ্ছে এবং আদায়কারী কর্মীদের পকেটেও অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। ভ্যাট নীতিমালাকে আরো আধুনিকীকরণ করা, ভ্যাট আদায়ে দুর্নীতি বন্ধ করা, অনলাইনভিক্তিক ভ্যাট আদায় পদ্ধতি চালু করা, বকেয়া ভ্যাট মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে অনতিবিলম্বে আদায় করে দেশের তরুণ সমাজের কর্মসংস্থানের পেছনে বিনিয়োগ করা দরকার। যারা ভ্যাট ফাঁকি দেন তাদের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করা যেতে পারে। আবার ভ্যাট আদায়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার। তবে ভ্যাট আদায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো আধুনিক পদ্ধতি খুঁজে বের করা দরকার।

লেখক : সমাজ বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist