reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সচেতনতাই রুখতে পারে হৃদরোগ

মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। সারা দেহে রক্ত সঞ্চালনের কাজটি করে মাত্র ১০-১২ আউন্স ওজনের এই হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী পেশি। হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এক নীরব ঘাতক। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। হৃদরোগের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যও দায়ী। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ আর ডায়াবেটিসের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহু গুণ।

দেশে আগের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ বেড়ে গেছে। হার্ট অ্যাটাকেই এখন মৃত্যু বেশি। ২০২২ সালে দেশে মৃত্যুর ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঘটেছে এ রোগে। ২০২১ সালের তুলনায় মৃত্যু সামান্য কমলেও এটিকে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকে গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি মানুষ মারা যায়। শহরে মৃত্যু ২৪ দশমিক শূন্য ৯ এবং গ্রামে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের ব্যবহার, ওবিসিটি বেড়ে যাওয়া, ট্রান্সফ্যাট, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে বাড়ছে হৃদরোগ। আগে বয়স্করা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি শিশুরাও হৃদরোগে মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত হার্ট চেকআপ করার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। কারণ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০২২ অনুসারে, হার্ট অ্যাটাকের পরই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, ব্রেইন স্ট্রোক, হাঁপানি, অন্যান্য জ্বর, লিভার ক্যানসার, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ব্লাড ক্যানসার, কিডনি রোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায়। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ছিল ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। মৃত্যুহার কিছুটা কমলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দৈনন্দিন অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা, দূষণ, ধূমপান এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাবের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন।

হৃদরোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে প্রধানত তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো- ধূমপান পরিহার, রাতের ভূরিভোজ কমানো ও প্রচণ্ড মানসিক চাপ সামলানোর সক্ষমতা অর্জন করা। এ ক্ষেত্রে মানসিক চাপ সামলাতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। হৃদরোগের কারণগুলোর মধ্যে মানসিক চাপের প্রভাব লক্ষণীয়। অত্যধিক মানসিক চাপের প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রে। এ জন্য দরকার হাসিখুশি থাকা। মুখ ভার করে থাকার চেয়ে হাসিখুশি থাকলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। এ ছাড়া শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি। কারণ ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে পারলে ভালো। বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে রাতে গুরুপাক খাবার একেবারেই নয়। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। সিগারেট, কোমলপানীয়/কোল্ডড্রিংকস বা কার্বোহাইড্রেডযুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। খালি হাতের ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সঠিক জীবনদৃষ্টি আর সচেতনতা। একটু সচেতন হলেই নীরব ঘাতক হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close