reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হোক

রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৩১ ডিসেম্বর আয়ান আহমেদ নামে এক শিশুকে খতনা করাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ওই শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তদন্তে উঠে আসে সেই হাসপাতালটির অনুমোদনই ছিল না।

ভুল চিকিৎসায় এমন মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে। একটি ঘটনা ঘটার পর সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিছুদিন এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। এরপর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। রোগশোক থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ছোটে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। হাসপাতাল এমন একটি ভরসাস্থল, যেখান থেকে মানুষ সুস্থ-সুন্দর জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সেখানে গেলে মানুষের জীবন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়। কারণ এমন সব হাসপাতাল আছে যেগুলোর নেই লাইসেন্স, যেখানে নেই দক্ষ চিকিৎসক বা চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। শিশু আয়ানের মৃত্যুই এর প্রমাণ। শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, তার তালিকাও এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৮ জানুয়ারি বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে খতনা করতে আসা আয়ানের মৃত্যু-সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদন আসার তথ্য সেদিন আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

অন্যদিকে গত ১৫ বছরে চিকিৎসার অবহেলায় ইউনাইটেড হাসপাতালে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন তুলে ধরে রিট আবেদনকারী পক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আদালতকে জানায়, সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭টি। আর সারা দেশে লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৩টি। সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া আছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনেরও। গত ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে তিনি এ নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিজেরাই যদি লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক-হাসপাতালগুলো বন্ধ না করে, তাহলে কঠিন পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।’

সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেশে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরাত্ম্য-আধিপত্য কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। করোনা অতিমারিসহ ডেঙ্গু সংক্রমণের ভয়ংকর দুঃসময়ে যেমন স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থা-অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা দেখা গিয়েছিল, অনুরূপ পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে বর্তমানেও। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দক্ষ চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্ট তো দূরের কথা, বরং ভুয়া ডিগ্রির লোকজন দিয়ে অবাধে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো দ্রুতই বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরকারের যে অর্জন তা ম্লান করে দেবে এসব অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close