reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নিষিদ্ধ কার্বোফুরানের বিক্রি বন্ধ করতে হবে

কার্বোফুরান একটি দানাদার কীটনাশক। সাধারণত ধান, গম, ভুট্টার মতো শস্যের পোকা দমনে এটি ব্যবহার করা হয়। কার্বোফুরানের কারণে কৃষক নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ই; একই সঙ্গে তা ভোক্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন বিভাগের এক সূত্র বলছে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪২ হাজার টন বালাইনাশক ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে আট থেকে দশ হাজার টন হচ্ছে কার্বোফুরান-জাতীয়। দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কীটনাশক এটি।

মাটি, পানি ও প্রাণীর জন্য কার্বোফুরান কীটনাশকটিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। কারণ, দানাদারজাতীয় ওই বালানাইশক স্প্রে করা হয় না। এটি মূলত ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে উদ্ভিদের শিকড় দিয়ে পাতা, ডাল ও শস্যের মধ্যে প্রবেশ করে। অন্যান্য বালাইনাশক সাধারণত প্রয়োগের পর ৫ থেকে ২০ দিন তা উদ্ভিদে থাকে। কিন্তু কার্বোফুরান থাকে ৩০ দিনেরও বেশি। ফলে ফসল তোলার পর তা ভোক্তার হাতেও পৌঁছে যায়। এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর তো বটেই, গাছের পরাগায়ণের ভূমিকা রাখা বিভিন্ন জাতের মাছি, প্রজাপতি থেকে শুরু করে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রেখে চলা লেডি বিটল ও টাইগার বিটলের মতো পোকা এর কারণে মারা যায়। এটি মাটির উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও কেঁচো এবং মাছের ক্ষতি করে। কার্বোফুরানকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করে, এটিকে নিষিদ্ধ করতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি ২০১৬ সালে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর বিশ্বের ৮৭টি দেশ কীটনাশকটি নিষিদ্ধ করে। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ৮৮তম দেশ হিসেবে কার্বোফুরান নামের বালাইনাশকটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ। কিন্তু যথাযথ নজরদারির অভাবে এখনো সারা দেশে প্রকাশ্যেই এই কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত মাসে মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঢাকা ও মানিকগঞ্জসহ ১০টি জেলার এক ডজন দোকানে কার্বোফুরান বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রকাশ্যে এই নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রি করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২৫২টি প্রতিষ্ঠান কার্বোফুরান আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রি করে থাকে। কীটনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৮৫ টন কার্বোফুরান মজুদ ছিল। যেসব কোম্পানির কাছে কার্বোফুরান আছে, তাদের গত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব ধ্বংস করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল পিটাক। অন্যথায় কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিষিদ্ধ-পরবর্তী বিক্রি, তদারকি বা বন্ধ করতে কোথাও কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা যায় এবং এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া। এ ছাড়া কার্বোফুরানের ব্যবহার ফলে মাটির উর্বরতাও কমছে। এ অবস্থায় প্রাণী ও প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই কীটনাশকটি ব্যবহার বন্ধ করার বিকল্প নেই। নিষিদ্ধ ঘোষিত কার্বোফুরান এখনো যেসব এলাকায় বিক্রি হচ্ছে সেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এর ব্যবহার বন্ধ না করা গেলে মানবদেহ ও প্রকৃতির ক্ষতি আরো বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close