reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা রোধে চাই সামাজিক সচেতনতা

দেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে নারীশিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক সমস্যায় গত বছর ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে, আমরা যদি তাদের শেখাতে পারি যে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন, সেটা জীবনেরই অংশ এবং আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে তাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। তখনই হয় তো তারা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, আত্মহত্যার কারণগুলো বাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে, সমস্যা তার চেয়েও গভীর। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত বিধায়, তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটা সামলাতে পারে না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদের আশাহত করে। শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুযোগের সমতার অভাব অনেকের মধ্যে হতাশাবোধ জন্ম নেয়, যা পরে নিজেকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। যদিও আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবেগী মন তা সহজে ধারণ করতে পারে না। এর ফলে একটি পরিবার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি থেমে যায় একটি সম্ভাবনাময় তারুণ্য। আত্মহত্যার হার বিশ্লেষণ করে আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, অভিমান ও প্রেমের সম্পর্কের মতো আবেগজনিত কারণে আত্মহত্যার হার বেশি। এই হার ৪৭ শতাংশ। ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৭ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর। ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী। ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা : পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা আনার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে হবে, যেন তারা কখনো নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব না করে। আবেগ প্রকাশে আস্থার জায়গা না পাওয়ায় কম বয়সি শিক্ষার্থী এবং সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীর আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বলে মনে করেছেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর আত্মহত্যা করা ৫১৩ জনের মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থী ২২৭ জন (শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ), কলেজশিক্ষার্থী ১৪০ জন (২৭ শতাংশ), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯ শতাংশ) এবং মাদরাসাশিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৮ জন (৯ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে পুরুষশিক্ষার্থী ২০৪ জন (প্রায় ৪০ শতাংশ) এবং নারীশিক্ষার্থী ৩০৯ জন (৬০ শতাংশের বেশি)। ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেন স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী। এই অবস্থায় স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর মাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বলা বাহুল্য, আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে হলে নীতিনির্ধারকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আরো বেশি করে সমন্বিত প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্ম নিশ্চয়তা প্রদান। ক্রমবর্ধমান অসমতা দূরীকরণ ও সেই সঙ্গে দরকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। অন্যথায় এ মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close