reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ মে, ২০২৪

`সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার সাক্ষীরা পক্ষপাতদুষ্ট'

ছবি : সংগৃহীত

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা মামলায় ২৫ বছর পর রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বরের এই ঘটনার মামলার মূল রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ‘যারা পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন। তাই তাদের সাক্ষ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আর আসামিদের অনেকে সাক্ষ্য দিতেও আসেননি, এমনকি জবানবন্দি গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটরাও আদালতে আসেননি। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারাও পক্ষপাতদুষ্ট ও সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন।’

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তীর আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।

আদালত রায়ে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন। মামলার বাকি ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবনের পাশাপাশি তিন জনকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ১ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাদের।

দণ্ডিত অপর দুই আসামি হলেন, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। দণ্ডিত এই তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মামলার অপর ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছেন। এরা হলেন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘এই মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সিডি গায়েব করা হয়েছে। আসামি আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন, তবে সেটাও অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেওয়ার মতো। সোহেল চৌধুরী কোনও অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না, অথচ তিনি খুন হলেন। ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন, জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অথচ এ ঘটনায় আহত অপর একজনকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

এত বছর ধরে ফেলে রেখে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘প্রতিটি মৃতের আত্মা বিচার চায়। আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন নিজের গা বাঁচিয়ে। নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিলেও সে অন্যের নাম সত্য বলতে পারে। তবে যাদের নাম বলছেন, তাদের কাছ থেকে কোনও রিকভারি হয় নাই। তারা যে সেখানে ছিল, সেটা বিশ্বাস করার কারণ আছে। তারপরও আদনান সিদ্দিকী যাদের নাম বলছে, তাদের মধ্যে একজনও যদি সেখানে না থাকেন বা সে যদি অন্য একজনের নামও অন্তর্ভুক্ত করে থাকে; তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।’

রায়ে বিচারক আরও বলেন, আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম আসলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি, বিধায় তাদের খালাস দেওয়া হলো।

এদিকে রায় ঘোষণা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে আমরা দেখবো, আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাবো কিনা?’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘বিচারক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেটা ভালো বুঝেছেন, সেই রায় দিয়েছেন। এখানে আমার কোনও অভিমত নেই। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, আপিল করবো কিনা।’

আসামি ইমনের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মাদ বলেন, ‘রায়ে আমরা অনেক খুশি। আসামি ইমন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই মামলায় কারাগারে আটক ছিল। আসামি ইমন এ মামলায় কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। বিনা কারণে ১৬ বছর ধরে জেল হাজতে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। আমরা এজন্য খুশি আসামি ইমন জামিন পেয়েছেন। আদালত ন্যায় বিচার করেছেন।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close