reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

র‌্যাগিং-বুলিং বন্ধের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ এক কালচারের নাম র‌্যাগিং। এটা এখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, এই প্রথা ‘সংক্রামক ব্যাধি’র মতো ছড়িয়ে গেছে স্কুল-কলেজ পর্যায়েও। নতুন কেউ এলে তাকে ধরে যাচ্ছেতাই আচরণ করাই হচ্ছে র‌্যাগদাতাদের মূল উদ্দেশ্য। মুরগি দেখলে শিয়াল যেমন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি ঝাঁপিয়ে পড়ে র‌্যাগদাতারা। যারা এক বছর র‌্যাগের শিকার হন, তারা আবার পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করেন নতুনদের র‌্যাগ দেওয়ার জন্য। এই অপেক্ষা যেন এক ‘পৈশাচিক আনন্দের’। কখন আসবে সেই সুদিন, কখন আসবেন নতুন ছাত্ররা। এ এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আমরা চাই, এই অনাচার দ্রুত বন্ধ হোক। স্বস্তি ফিরে আসুক নতুন ছাত্রদের মাঝে।

শুধু র‌্যাগিংই নয়, শিক্ষার্থীদের বুলিংয়েরও শিকার হতে হয়। স্কুলগুলোতে বুলিংয়ের প্রচলন আছে, তবে অপবাদ ও ভয়ের কারণে সেটা প্রকাশ না করায় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এটি প্রায়ই ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতি বাড়ে, এমনকি ড্রপআউটের ঘটনাও ঘটে। ২০১৯ সালে ইউনিসেফের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর একজন সমবয়সিদের বুলিংয়ের শিকার হয়। ‘বিহাইন্ড দ্য নাম্বার : এন্ডিং স্কুল ভায়োলেন্স অ্যান্ড বুলিং’ শীর্ষক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব শিশু মাঝে মধ্যেই হয়রানির শিকার হয় তারা অন্য শিশুদের তুলনায় নিজেদের বহিরাগতভাবে এবং ক্লাসে তাদের অনুপস্থিতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে। তবে আশার কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ ও নির্ভয়ে লেখাপড়া করার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা করছে সরকার। এতে বুলিং ও র‌্যাগিং বন্ধের পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন আচরণের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সদস্যরা আসবে শাস্তির আওতায়। বুলিং এবং র‌্যাগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে করা যাবে ফৌজদারি মামলা। এ নীতিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে নিয়ে এসেছে সরকার। শনিবার (২১ জানুয়ারি) প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধ কমিটি গঠনের বিধান রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি একটি খসড়া শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। তবে কওমি মাদরাসা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত নয়। খসড়াটিতে মৌখিক, শারীরিক এবং সাইবার- এ তিন ধরনের বুলিংয়ের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন আচরণের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। খসড়া অনুসারে, বুলিং এবং র‌্যাগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।

র‌্যাগিং ও বুলিং বন্ধে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকার সাধুবাদ পেতেই পারে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে আসা এই অপসংস্কৃতি মূলত শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি করে। র‌্যাগিংয়ের নামে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় বা শারীরিক ও মানসিকভাবে যেন হেনস্থা না হতে হয় সেদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। আমরা আশা করি, এই নীতিমালা দ্রুতই চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close