আজহার মাহমুদ

  ১৪ আগস্ট, ২০২০

মুক্তমত

দ্বিগুণ ভাড়া প্রত্যাহার সময়ের দাবি

করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সাধারণ মানুষ যেন এখন জিম্মি। একদিকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সবকিছুতে দ্বিগুণ টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু মাস শেষে নিজের বেতন-বোনাসের পরিমাণ সেই আগের অবস্থায় রয়েছে। অনেকের কর্মসংস্থান নেই, নেই আগের বেতনও। বোনাস নেই অনেকের। কিন্তু এত কিছু মধ্যেও দ্বিগুণ ভাড়া ঠিকই আছে গণপরিবহনে। আর এই দ্বিগুণ ভাড়া দিতে দিতেই সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন জনতার অন্যতম দাবি গণপরিবহনের দ্বিগুণ ভাড়া প্রত্যাহার করা। গত এক মাস গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। যাত্রী ওঠানামা করছে আগের মতোই। প্রতিটি সিটেই এখন যাত্রী বসছেন। শুধু তা-ই নয়, যাত্রীর আসন সংখ্যা শেষ হওয়া সত্ত্বেও যাত্রী তুলছেন চলকরা। এমতাবস্থায় দ্বিগুণ ভাড়া দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু? অথচ দ্বিগুণ ভাড়া ঠিকই আদায় করে নিচ্ছেন চালকরা। গত ১০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় একটি গ্রুফ (Desperately Seeking- Chittagong) ডিএসসিতে শোভন চক্রবর্তী নামের একজন ব্যক্তি পোস্ট করেছেন, ‘গণপরিবহনে ডাবল ভাড়া প্রত্যাহার করার সময় এসে গেছে। প্রায় সব গাড়িতেই নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মানুষ, মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত করার কথা বললেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ডাবল ভাড়া।’

তার এই পোস্টে রাশেদ মোহাম্মদ রিপন নামের একজন শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ‘আমার তো প্রতিদিনই এ রকম হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে ডাবল ভাড়া। ব্যবসায়িক পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে গণপরিবহনই আমার একমাত্র বাহন। সে ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। অনতিবিলম্বে ১০০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার চাই।’

আবদুল্লা রাকিব নামের একজন সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘গত ১ সপ্তাহ ধরে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি নিজেও হচ্ছি। কোনো যাত্রীর মাথাব্যথা নেই। গাড়ির হেল্পারকে বিআরটিএর কথা বললে উল্টো বলে কিচ্ছু হবে না। কী করবেন করেন। আমার প্রশ্ন কার জন্য এই ৬০ শতাংশ? যাত্রীদের বেতন কী ৬০ শতাংশ বেড়েছে?’

এভাবে বিভিন্নজন মন্তব্য করেছেন এ বিষয় নিয়ে। সবার দাবি, এই দ্বিগুণ ভাড়া প্রত্যাহার করা হোক। গত ৩১ মে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও ১ জুন থেকে সেটা দ্বিগুণ ভাড়া হিসেবে কার্যকর হয়েছিল।

মানুষের একটাই প্রশ্ন, যেভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেভাবে তো বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। আর যেখানে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেখানে কীভাবে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে গাড়িচালকরা। এ বিষয়ে বিআরটিএ, সড়কমন্ত্রী কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। এভাবে দিন চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে। প্রশাসনের টনক না নড়লে এই সেক্টরের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দিন দিন বেড়েই যাবে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই, সেখানে কেন মানুষ দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলাচল করবে? কিন্তু উপায় নেই বলে সবার বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাহলে কি আমরা পরিবহণ শ্রমিকদের নিকট জিম্মি নই? এটা কি এক প্রকার ডাকাতি নয়?

আসলে প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা আছে। আমরা সবাই জেনে-বুঝে এই অনিয়মের মধ্যেই জীবনযাপন করছি। যত দিন সরকারের এই বিষয় নিয়ে টনক নড়বে না, তত দিন এমন ভোগান্তি আর দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের একটাই চাওয়া গণপরিবহনের ভাড়া আগের মতো করা হোক। তারা পারছে না দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে। এই দ্বিগুণ ভাড়া প্রত্যাহার করে জনমনে একটু স্বস্তি এনে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। করোনার এই কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের এই চাওয়াটুকু যেন অতিদূত সরকার পূরণ করে সেই কামনা করছি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close