খায়রুজ্জামান খান

  ১৩ জুলাই, ২০২০

মুক্তমত

সচেতনতাই গড়তে পারে দক্ষ জনসম্পদ

রাষ্ট্র গঠনের মূল উপাদান হলো জনসংখ্যা। জনসংখ্যাকে একটি দেশের সম্পদ বলা হলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বরং বোঝা বলা হয়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে তৈরি হয় নানা সমস্যা। বেকারত্বের প্রধান কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা। অপর্যাপ্ত কর্মব্যস্ততা, চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব ইত্যাদির মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়ে এলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেমে নেই।

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের আদমশুমারি ১৯৭৪ অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৪ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ; যা ধীরে ধীরে উন্নীত হতে থাকে এবং ১৯৮১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৯৯ লাখ। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৫ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ । ২০০১ সালের জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ দশমিক ৫ মিলিয়ন। যা বিগত আদমশুমারির তুলনায় অনেকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা ২০০১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হয়। ২০০১ সালে দেশে পরিবারের সংখ্যা ছিল ২৫ দশমিক ৩১ মিলিয়ন, যার মধ্যে ১৯ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন গ্রামীণ এলাকায় এবং ৫ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ছিল নগর এলাকায়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল গড়ে ৪ দশমিক ৯ জন। এ সময় পুরুষ-মহিলার অনুপাত ছিল ১০৬.৬, শিশু-নারী অনুপাত ছিল ৫২৬ এবং পোষ্যতার অনুপাত ছিল ৮৩।

অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল ছিল। কারণ তখন জন্ম-মৃত্যুহার ছিল প্রায় সমান। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত ধীরগতিতে বাড়তে থাকে। এ সময়ে দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ নানা ধরনের দুর্যোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের উচ্চ বিস্তারকে এর কারণ বলে মনে করা হয়। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর কারণে মৃত্যু সাড়ে পাঁচ লাখ অতিক্রম করেছে। যেখানে বাংলাদেশে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যু ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোভিড-১৯-এর কারণে লাখ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে। প্রবাসীদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করা হলে, অফিস- আদালত, গার্মেন্টস, কল-কারখানা, মুদি দোকান থেকে শুরু করে ছোটখাটো সব ধরনের পেশাজীবী মানুষের সাধারণ জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো সেটা উদ্বেগজনক। পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো পুরোপুরি সচেতন হয়ে ওঠেনি। তাই পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ করার লক্ষ্যে ছুটছে স্বপ্নের রাজধানী শহর ঢাকাতে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যেসব নগরে ১ কোটির বেশি মানুষ বাস করে, সেসব শহরকে জাতিসংঘের বসতিবিষয়ক সংস্থা ইউএন হ্যাবিট্যাট মেগাসিটি নাম দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর গ্লোবাল সিটিজ ইনস্টিটিউশন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশ্বের তৃতীয় জনসংখ্যাবহুল শহর এবং একই সময়ে জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাবই একমাত্র কারণ। পরিবেশ দূষণ, মাদকাসক্তি, শিক্ষার অভাব ইত্যাদি সমস্যার কারণ অধিক জনসংখ্যা। বেকারত্ব থেকে পরিবেশ দূষণ, মাদকাসক্তি থেকে জঙ্গিবাদ তৈরির মূলে রয়েছে জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি। বেকারত্বের হার দূর না করে কখনো দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। জনসংখ্যাবহুল এই দেশে দরিদ্রদের পুনবাসন হলেই দেশ উন্নত হবে। সুতরাং সচেতনতা ও শিক্ষিত জনসম্পদ এর পাশাপাশি সরকার ও জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান অন্যতম উপায় হতে পারে। করোনাকালীন সবাইকে সহোযোগিতা এবং মানবিক দৃষ্টির প্রতি সদয় হতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close