সাধন সরকার

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

পর্যালোচনা

নিবন্ধিত শিক্ষকদের আবেদন

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল, স্কুল-২, কলেজ পর্যায়) শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘এনটিআরসিএ’ (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি (১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণসহ) জারির কথা শোনা যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, গণবিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই শূন্য থাকাসাপেক্ষে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। যার অর্থ হলো, আবার যত খুশি তত আবেদন! কেননা গতবারের অর্থাৎ ২০১৮ সালের নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের (১-১৪তম নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের) উদ্দেশ্যে যে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল; সেখানে যত খুশি তত আবেদনের কথা বলা হয়।

সহজ করে বললে, এর মাধ্যমে বেকার চাকরিপ্রত্যাশীদের ‘পকেট কাটা’ হয়েছিল! বলা হয়েছিল, সব নিবন্ধনধারী পদের ধরন ঠিক রেখে শূন্য পদসাপেক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। ২০১৬ সালের গণবিজ্ঞপ্তিতে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। যার ফলে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও আবেদন প্রক্রিয়ার মারপ্যাঁচে অনেক মেধাবী নিবন্ধনধারীরও চাকরি হয়নি। আবেদনের এমন অবিবেচনাপ্রসূত পদ্ধতির ফলে আবেদনে লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশীর প্রায় প্রত্যেককে আবেদনের জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। যাদের মেধাতালিকা একটু পেছনের দিকে ছিল তাদের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য আরো বেশি অর্থ খরচ করছেন। কেননা একটি পদের চাকরির আশায় একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে অনেক প্রতিষ্ঠানে (শূন্যপদ সাপেক্ষে) পৃথক আবেদনে অর্থ খরচ করতে হয়। অনেকে শত শত প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেও স্বাভাবিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কেন একটি পদে চাকরির আশায় একাধিক প্রতিষ্ঠানে তথা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন করতে হবে? বাস্তবিক পক্ষে, খুব সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউ-ই জানেন না ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানে আর কয়টা আবেদন করলে তার চাকরি নিশ্চিত হবে? প্রশ্ন হলো, একটি আবেদনের মাধ্যমে কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে না? আসল কথা হলো, লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধনধারীদের আবেদনের প্রতিযোগিতায় নামিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একজন পরীক্ষার্থীকে শুরুতে আবেদন করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগের সময় চাকরি পেতে আবার কেন আবেদন করতে হবে? তাও আবার একটি আবেদন না, যত খুশি তত আবেদন। কেননা একাধিক আবেদন না করলে মেধাবী নিবন্ধনধারীরও চাকরি ফসকে যেতে পারে!

গত গণবিজ্ঞপ্তিতে (২০১৮ সালে) এমন কোনো চাকরিপ্রত্যাশী পাওয়া যাবে না, যিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য হাজারের বেশি টাকা খরচ করেননি। নির্দিষ্ট করে বললে, মেধাতালিকার একটু নিচের দিকের চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির আশায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদনে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। বেকার চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এটা তামাশা ছাড়া আর কী? বাংলাদেশের আর কোনো চাকরিতে এমন ‘পকেট কাটা’ নিয়োগ প্রক্রিয়া আছে কি না জানা নেই! আমি একজন নিবন্ধিত চাকরিপ্রত্যাশী। আমিও গতবারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনেক আবেদনে কয়েক হাজার টাকা খরচ করেও কোনো আশানুরূপ ফল পায়নি (যদিও মেধাতালিকা আটশোর মধ্যেই ছিল)। বাংলাদেশের অন্যান্য চাকরিতে একটি আবেদনের মাধ্যমে চাকরি হলে শিক্ষক নিবন্ধনে হবে না কেন? নাকি বেকার চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিতেই হবে! আরো সহজে ব্যাখ্যা করে যদি বলি, একটি প্রতিষ্ঠানে একটি পদে ২৫ জন চাকরিপ্রত্যাশী নির্দিষ্ট অর্থ খরচ করে আবেদন করলেও (কেননা কেউ জানে কে কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবে তথা কার চাকরি হবে) চাকরি হবে একজনের, বাকি ১৯ জনের আবেদনের কষ্টের টাকা নষ্ট হবে! পরিশেষে একটি প্রতিষ্ঠানে তো নিয়োগ হবে, তাহলে কেন একটি আবেদনের টাকা রাখা হবে না?

শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্বল করে ৫ লাখের বেশি বেকার নিবন্ধনধারীর প্রতি এনটিআরসিএর এই ‘পকেট কাটার’ প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত। নিবন্ধনধারীরা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদন চান না। তারা বিষয়ভিত্তিক একটি আবেদনের মাধ্যমে মেধাতালিকা অনুযায়ী নিয়োগ চান। আর এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া (একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন অর্থ হলো যত খুশি তত আবেদন) যদি রাখতেই হয়, তাহলে আবেদন যতই হোক একটি আবেদনের টাকা রাখলেই তো হয়। এনটিআরসিএর কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনে এভাবে অসহায় বেকারদের পকেট কাটবেন না। নিবন্ধিতদের লটারির মতো করে ভাগ্য নির্ধারণ করবেন না! নিয়োগ প্রক্রিয়া সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নয়, বিষয়ভিত্তিক একটি আবেদনের ভিত্তিতে মেধাতালিকা অনুসারে অতি দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।

লেখক : পরিবেশকর্মী ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close