হিমেল আহমেদ

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পর্যবেক্ষণ

ইন্টারনেট আসক্তি এবং প্রজন্ম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বের সামনে এক উচ্চমর্যাদা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ সাফল্য আমাদের সবার জন্য গর্বের। বায়োমেটিক সিম রেজিস্ট্রেশন, থ্রিজির পর ফোরজি, নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন, মেট্রোরেল, বিভিন্ন ই-সেবা প্রদানসহ ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা জীবনে গতি এনেছে। দৈনন্দিনের যাবতীয় কর্মকান্ড অতি সহজেই মোবাইল, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পাদন করা যাচ্ছে। নতুন এইপ্রজন্ম ইন্টারনেট, মোবাইল, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এটা বলাটা ভুল হবে না। সহজতর হয়ে পড়েছে মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনতে। যতটা ডিজিটাল হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তি খাত; ততটাই অ্যাডভান্স হচ্ছে আমাদের উঠতি প্রজন্ম। মোবাইল আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এ প্রজন্মকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে ইন্টারনেটের এ সহজলভ্য ও হাতে হাতে স্মার্টফোনের অবাধ বিচরণ এ প্রজন্মকে ভুল পথে নিয়ে যেতেও সক্ষম। বিজ্ঞান যে শুধু আশীর্বাদ নয় অভিশাপ, তা বর্তমান যুগে বেশি দৃশ্যমান। আর এ বিজ্ঞানের একটি অভিশাপ হলো ‘পর্ন বা পর্নো; যা সমাজের ভয়াবহ এক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ মানুষ পর্নো আসক্ত, এটা ভুল নয়; যা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও হাতের নাগালে স্মার্টফোনের সুবাদে। পর্নো আসক্ত কিশোর ও যুবকরা বেড়ে উঠছে বিকৃত মানসিকতা নিয়ে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজে। বাড়ছে ইভটিজিং ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। কৌতূহল থেকেই পর্নোকে জানার ইচ্ছা উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় পর্নো নিয়ে সরাসরি প্রচার নিষিদ্ধ রয়েছে। পর্নো আসক্তি নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন বাংলাদেশে নানা কারণে যৌনতা সম্পর্কিত ব্যাপারগুলোকে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হয়। যেগুলো লোক সম্মুখে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। যৌনতা যে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, তা বাচ্চাদের শেখানো হয় না। যেহেতু তারা সঠিক যৌন শিক্ষা পায় না ও যৌনতাকে নিষিদ্ধ হিসেবে জানে তাই তারা এই নিষিদ্ধ পর্নোর দিকে আকৃষ্ট হয় বেশি। আবার এসব শিশু যখন একবার আসক্তিতে ঝুঁকছে তারা আর এ জায়গা থেকে বের হতে পারছে না। ফলে বিকৃত যৌন শিক্ষার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এসব কিশোর-কিশোরী তাদের পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারকে কঠোর হওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি খুব সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা এ দেশের তরুণদের জন্য মোটেও সুখবর নয়। অভিভাবক ও সরকারের এ বিষয়ে কড়া নজর দেওয়া জরুরি। কেননা বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা বেড়েই চলেছে। যার প্রধান একটি কারণ হতে পারে এ পর্নো আসক্তি। এ বছরের প্রথম ২৩ দিনে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার বেশির ভাগই শিশু ও কিশোরী। আর ধর্ষক বেশি রভাগ যুবক। একদিকে মাদকাসক্তি এবং অন্যদিকে পর্নো আসক্তি এই দুটা সমাজের ব্যাধি হয়ে গিয়েছে, যেগুলোর কঠোর প্রতিরোধ করা জরুরি। গ্রাম কিংবা শহরে। সর্বত্র পর্নো অবাধে সুলভ মুল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। যার শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোররা। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে অনেক কিশোর অসামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে লিপ্ত করছে। কৌতূহল ও আসক্তির প্রভাবে ভুল পথে পা দিচ্ছে অনেকে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও তা কার্যকর নয়। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ঠিক তেমনি পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় হাজারো অশ্লীল সাইটগুলো ব্যবসা করছে। যেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পাড়ামহল্লায় বিভিন্ন গান, গেম ডাউনলোডের দোকানেও অবাধে শিশু কিশোরদের মোবাইলে পর্নো ডাউনলোড করে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের এ বিষয়ে নজরদারি করা উচিত। অশ্লীল গান, চিত্র কিংবা সিনেমা থেকেও শিশুদের দূরে রাখার বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। মাদকের মতোই ভয়াবহ এ পর্নো। এ বিষয়ে সজাগ থাকার দায়িত্ব আমাদের সবার। নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে প্রত্যেক সন্তানের জীবন গড়া উচিত। কেউই যেন ভুল পথে পা না বাঁড়ায় এটি দেখার দায়িত্ব আমাদের সবার।

লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close