reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি, ২০১৯

শয্যা বাড়লেও সেবা বাড়ছে না

ছোটবেলায় দাদুর মুখে একটি ছড়া-কবিতা শুনেছিলাম, ‘এক চন্দ্র গগনে অন্ধকার হরে/লক্ষ লক্ষ তারা দেখ কি করিতে পারে’! মর্মার্থ সেদিন দাদু আমাকে বুঝিয়েছিলেন। পারিপার্শিকতা এখন তার পুরোটাই উপলব্ধির সব তন্ত্রিতে নাড়া দিয়ে চলেছে। লাখো তারার আলোয় আমরা আলোকিত হতে ব্যর্থ হলেও একটি চাঁদ আমাদের নান্দনিক আলোয় আলোকিত করতে পারে। আমাদের কাছে চাঁদ তাই এত প্রিয় ও গ্রহণীয়। আমরা সংখ্যা অথবা আয়তনে অনেক এমন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করি না। আমাদের প্রত্যাশা গুণগত মানে।

দেশে সরকারি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে রোগী এবং হাসপাতাল। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা চার কোটির কিছু কম। এর মাঝে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। প্রায় ৫০ হাজার। এদের মাঝে বেশির ভাগ রোগীকে ইনসেনটিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আইসিইউর সংখ্যা এতই অপ্রতুল যে, তাদের চিকিৎসাসেবা পাওয়াটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ শয্যাসংখ্যা মাত্র ২২১টি। এর মাঝে বেশ কিছু আবার সচল নয়। তবে এর বিপরীতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা কম হলেও আইসিইউ শয্যাসংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ইনস্টিটিউট, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতাল মিলিয়ে দেশে সরকারি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ৩১ হাজার ২৬০টি। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার দেয় তথ্যানুযায়ী এখানে ন্যূনতম আইসিইউ শয্যা থাকার কথা ১ হাজার ২৫০টি। আছে মাত্র ২১১টি। এসব আইসিইউর বেশির ভাগ আবার রাজধানীকেন্দ্রিক। ফলে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিল রোগীদের জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। আবার বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা আইসিইউর কয়েকটি ছাড়া নামসর্বস্বতার অভিযোগ বেশির ভাগ ইনসেনটিভ কেয়ারের। আইসিইউ পরিচালনার জন্য ন্যূনতম যন্ত্রপাতি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা নার্স ছাড়াই আইসিইউ পরিচালনা করছে এসব হাসপাতাল। অনুমোদন ছাড়া আইসিইউ পরিচালনার অভিযোগ আছে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে জটিল রোগীদের একটি অসহায়ত্বের নির্মম চিত্র। আইসিইউর অপ্রতুলতাই যেখানে প্রধান আসামি।

সরকার ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারলেও মানসম্পন্ন সেবা দিতে যে পারেনি, এক থা বললে বেশি বলা হবে না। আমরা মনে করি, দেশের মানুষ নবনির্বাচিত সরকারের কাছে উন্নত মানের সেই চিকিৎসাসেবার প্রত্যাশা করতেই পারে। চিকিৎসাসেবা একবার যখন দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, এবার তার মান একটি নির্দিষ্ট মানে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close