অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকুক
যেকোনো সফরের মধ্য দিয়েই আন্তঃসম্পর্ক জোরদার হয়। আর সে সফর যদি দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের শীর্ষপর্যায়ের মধ্যে হয়, তখন সেখানে শুধু আন্তঃসম্পর্কই নয়, বরং অনেক অমীমাংসিত বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক পরিসমাপ্তিও ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। গত শুক্রবার শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থল সীমানার মতো জটিল সমস্যা সমাধান হয়েছে, যা একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো। তেমনি আমরাও প্রত্যাশা করি, এখনো যেসব অমীমাংসিত বিষয় দুদেশের সম্পর্কে বাধা হয়ে রয়েছে, সেগুলোরও দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। যদিও দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে যার হাতে এই চুক্তির চাবিকাঠি, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কাছ থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ইতিবাচক ঘোষণার প্রত্যাশা করছেন সবাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উল্লিখিত সফরকে কেন্দ্র করে আলোচনায় মুখর ছিল দেশ। বিশেষ করে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সফরে অগ্রগতি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সফরকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে বিশ্লেষকরা অবশ্য এবারের সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সাংস্কৃতিক সফর বলে মতো দিয়েছেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সংস্কৃতি লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের কলকাতা সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তবে দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাভাবে তিস্তা, রোহিঙ্গাসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো তুলেছেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরের ব্যাপারে মমতার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা তিস্তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাই না।’ তবে দুই বাংলার মানুষজন যাতে সুখে থাকতে পারে, সে বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি অর্জন দেশের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক সম্মানের। এ ছাড়া গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যদূরীকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে সম্মান জানানো হয়। শেখ হাসিনাও এ সম্মান ‘সমগ্র বাঙালি জাতিকে উৎসর্গ’ করার ঘোষণা দেন। এতে দুই বাংলার মানুষই গৌরবান্বিত হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে অগ্রগতির যে ধারা সূচিত হয়েছে, যুগে যুগে তা অব্যাহত থাকবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"