রোহিঙ্গা সংকটের শেষ কোথায়
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে দেশের বেশির ভাগ মানুষের ধারণা আজ সঠিক বলে প্রতীয়মান হতে চলছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে এ যাবৎ মিয়ানমার যা করেছে, তাকে একটি পরিকল্পিত নাটক ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। অন্তত বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ সে কথা বিশ্বাস করে। মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে তাদের কার্যকলাপ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের নৃশংসতম ঘটনা ঘটানোর পরেও তাদের বোধোদয় হয়নি। তারা তাদের পরিকল্পিত নাটককে ধারাবাহিক নাটকে রূপান্তর করে নতুন পর্বে পুরনো সুরে কথা বলতে শুরু করেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথম পর্বে জনগোষ্ঠীটির আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সেই তালিকার প্রতি বিন্দুমাত্রও সম্মান প্রদর্শন না করে আট হাজার ৩২ থেকে মাত্র ৩০০ জনকে মিয়ানমার ফেরত যাওয়ার প্রশ্নে ছাড়পত্র দেয়। বিষয়টি নিঃসন্দেহে সন্দেহজনক এবং দুরভিসন্ধিমূলক। নাটকের পরবর্তী পর্বে আমরা মিয়ানমারকে একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকতে দেখেছি। যেখানে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কর্মীদেরও ডাকা হয়েছে। মিয়ানমার সেই সম্মেলনে শনাক্ত ৩০০ জনের নাম প্রকাশ করাসহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়টি তুলে ধরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তালিকার নমুনা দেখে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ কথা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, এই ৩০০ জনের তালিকা শনাক্ত করে দেশটি তাদের অপকর্মের পক্ষে একটি অকাট্য প্রমাণ দাঁড় করাল। সম্ভবত তাদের অপকর্মের জন্য নতুন করে প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যে ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে ঢুকেছে তারা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক। বিষয়টি নতুন করে প্রমাণের কোনো দরকার আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। ঐতিহাসিকভাবে বিষয়টি প্রমাণিত এবং বিশ্ববাসীর কাছেও তা অজানা নয়। তবুও কেন জানি নাটকের কোনো সমাপ্তি নেই। ধারাবাহিকভাবে তা চলছে তো চলছেই। কবে শেষ হবে? আদৌ শেষ হবে কি না, তা কেউ জানে না। এ রকম একটি অনিশ্চিত সম্ভাবনার মাঝে ঝুলে আছে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান।
আমরা মনে করি, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। আর সে কারণেই বিষয়টির সমাধান নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। আর সেই ভাবনার মাঝে যুক্ত হতে হবে আমাদের সামষ্টিক শক্তি। যে শক্তি অন্যকে সমীহ করাতে শেখাবে।
"