মো. মারুফ মজুমদার, চবি

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

জহিরের স্বপ্নপূরণ : মেট্রোরেলে শতাধিক হাফেজ

কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের অনিমেষ হাতছানির সুন্দর পরিসমাপ্তি দেখতে কার না ভালো লাগে! স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, প্রাণবন্ত-উদ্দীপ্ত করার পাথেয় জোগায় কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। তাই তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্পাদকীয় পদের মাদরাসাবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম তার স্বীয় সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে পূরণ করে যাচ্ছেন একের পর এক স্বপ্ন। বলছিলাম যোগাযোগব্যবস্থা পরিবর্তনের স্বর্ণযুগে এক শ পাঁচজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

সংগঠক হিসেবে জহিরুল ইসলাম বরাবরের মতোই তার একাগ্রতা আকাশচুম্বী। পদটি পাওয়ার পর বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর সার্বিক উন্নয়নকল্পে ভ্রমণের অংশ হিসেবে যান জামেয়া মহিউস সুন্নাহ মাদরাসায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম সবিস্তারে ছড়িয়ে দিতে ও মাদরাসার উন্নয়নে কী কী করা দরকার- তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের যে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের হালচিত্র দেখানোর একপর্যায়ে মাদরাসার হাফেজ শিক্ষার্থীদের সম্প্রতি উন্মুক্ত হওয়া মেট্রোরেলে ভ্রমণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু যেমন স্বাধীনতা-পরবর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন সৃষ্টি করেছেন অতিদ্রুততার সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন তৈরি পাঁচশোর অধিক মডেল মসজিদ স্থাপন করে দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি; ঠিক তাদেরই সংগঠনের দক্ষ সাংগঠনিক সদস্য হিসেবে জহিরও কথা দিয়েছেন তাদের (মাদরাসার হাফেজ শিক্ষার্থী) স্বপ্নপূরণ করবেন। করেছেনও তাই।

শিশিরের সমারোহে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মসজিদের মাইকে মোয়াজ্জিনের আজানের আল্লাহু আকবার ধ্বনি। মাদরাসাশিক্ষার্থীরা তখন অজু করে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাই তাড়াহুড়ো করছে নিজেকে সেজেগুজে তৈরি করার জন্য। নামাজ শেষ করে মাদরাসার নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শেষে সবাই এখন তৈরি। শিক্ষার্থীরা সবাই উচ্ছ্বাসিত। কারো কারো মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কারণ শিক্ষার্থীরা জীবনে প্রথমবার ভিন্ন এক শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতায় অবগাহন করতে যাচ্ছে। সবার অধীর আগ্রহের পর মাদরাসার ওস্তাদরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে রওনা দিয়েছে। মাদরাসার গেট থেকে উত্তরা মেট্রোরেল স্টেশনে যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীদের যেন বাঁধভাঙা উল্লাস। কে, কার আগে স্টেশনে পৌঁছাবে এই নিয়ে তো রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু। স্টেশনে পৌঁছেই লাইন ধরে টিকিট ক্রয় করল হাফেজ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। সবাই এখন অপেক্ষা করছে কখন ট্রেন আসবে স্টেশনে? অবশেষে সবার স্বপ্নের মেট্রোরেলের বাঁশি বেজে উঠল। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে একে একে করে স্বপ্নের মেট্রোরেলে ওঠার জন্য এখন পুরোদমে প্রস্তুত। হাজারো অপেক্ষার প্রহর শেষে কোমলমতি কোরআনের হাফেজরা ঢাকা মেট্রোতে উঠে বসল। সবার চোখেমুখে আনন্দ-উল্লাসের এইটুকু যেন কমতি নেই।

অবশেষে মেট্রোরেল চলা শুরু করেছে। ট্রেনের গন্তব্য উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন। হুজুররা ১০৫ জন হাফেজকে নিয়ে পুরো একটি কামড়া জুড়ে বসেছে। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মেট্রোরেল ভ্রমণের এই ভিন্ন আয়োজন। এরপর মাদরাসা শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দেশের উন্নয়নের জন্য দোয়া করে। শিক্ষার্থীদের এক হাতে ছিল তখন বাংলাদেশের পতাকা এবং আরেক হাতে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড। সেদিন মেট্রোরেলের একটি বগির পুরোটা জুড়ে ছিল সাদা পাঞ্জাবি এবং জুব্বা পরা কোমলমতি মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। এই প্রথম তারা ভিন্ন রকমের শিক্ষা সফরের অংশীদার হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশে কোনো কার্পণ্য করলেন না।

পুরো মেট্রোরেল ভ্রমণে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা দুচোখ দিয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সুবিশাল অট্টালিকাসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন। শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরই বেশি ছিলেন এতিম। এদের মধ্যে কয়েকজন এতিম শিক্ষার্থী মেট্রোরেল চড়ার সময় বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে আনন্দ-অশ্রুতে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেন মেট্রোরেল ভ্রমণে। শিক্ষার্থীরা এমন ভিন্ন রকমের শিক্ষা সফরের জন্য আয়োজক বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সাধুবাদ জানান। তারা আশা ব্যক্ত করেন এভাবে দেশের সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং বড় প্রকল্পসমূহে ঘুরে দেখার জন্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাদরাসাবিষয়ক সম্পাদকও শিক্ষার্থীদের কথা দিলেন এভাবে তাদের চমকপ্রদ সব আয়োজন উপহার দেবে।

মাদরাসার হুজুররাও এমন আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন এবং ধন্যবাদ জানান দেশের মানুষকে এমন সুন্দর সব উপহার দেওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের পুরো মেট্রোরেল ভ্রমণের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল সাংবাদিকদের সুবিশাল বহর। নতুন এই ভ্রমণে কাছ থেকে সাংবাদিকদের পেয়ে শিক্ষার্থীরাও আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশে কোনো কমতি রাখেনি। এভাবেই আবার মতিঝিল স্টেশন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনে আসার মাধ্যমে শেষ হয়েছে নতুন এক চমকপ্রদ শিক্ষা সফরের একশো পাঁচ শিক্ষার্থীর মেট্রোরেল ভ্রমণের স্বপ্নের অভিজ্ঞতা।

মেট্রোরেলে শিক্ষার্থীদের নতুন এই অভিজ্ঞতার নেপথ্যের কারিগর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন সম্পাদকীয় পদ মাদরাসাবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানান, এক শ পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য মেট্রোরেল ভ্রমণের এই আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরে আমি আনন্দিত। ইনশাআল্লাহ আগামীতে মাদরাসাশিক্ষার্থীদের জন্য আরো চমকপ্রদ আয়োজনে মুখিয়ে থাকব আমি। স্বপ্ন-প্রত্যয়ী এই তরুণ তুর্কির জন্য রইল শুভকামনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close