গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ মে, ২০১৭

সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত

সব দলের সমান সুযোগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ওপর তাগিদ দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পাশাপাশি প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আর ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটদান নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য। প্রণীত রোডম্যাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়, এমন বিধানও বাদ দিয়েছে। এছাড়া গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকের খসড়া প্রস্তাবিত রোডম্যাপের অনেক অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে নির্বাচনের উপযোগী একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিশন আশা করছে, প্রণীত রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে সব দলকে নিয়ে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কমিশনের রোডম্যাপ পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মো. নুরুল হুদা জানান, এবারকার রোডম্যাপে সাতটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এই রোডম্যাপে নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের (ডিভিএম) কথা উল্লেখ নেই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সিইসি।

পুরনো এবং নতুন রোডম্যাপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উত্থাপিত রোডম্যাপ এবং গতকাল মঙ্গলবারের রোডম্যাপে বিস্তর ফারাক। পুরনো রোডম্যাপে ২৩টি কর্মপরিকল্পনা সংবলিত প্রস্তাবনা থাকলেও এবার তা কমিয়ে ৭টি নির্ধারিত এজেন্ডা এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সময়ক্ষেপণ সংক্রান্ত নির্বাচনে সহায়ক সংক্রান্ত ৮টি অনুষঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংশয় থাকা বিতর্কিত ইভিএম বা ডিভিএম রোডম্যাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে, ইসির খরচে ভোটার স্লিপ বিতরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন এবং নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং। আগের রোডম্যাপ ১৭ পৃষ্ঠার হলেও নতুন প্রণীত কর্মপরিকল্পনা মাত্র ৪ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনকে অর্থ ও পেশিশক্তির অবৈধ ব্যবহারমুক্ত এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য আইনি কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মতামত নেওয়ার ওপর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিধান চূড়ান্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সহজ এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদান নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক এবং সাবেক ইসির অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপ করে তাদের সুচিন্তিত মতামত নেওয়া। এর জন্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা রাখা হয়েছে প্রণীত কর্মপরিকল্পনায়। ৩০০ সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য আগস্ট থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে। ভোটারদের তালিকাভুক্ত, মৃত ভোটারদের কর্তন এবং ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম শেষ করতে চলতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছর ১৮ জুনের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা রাখা হয়েছে। আর ভোটারদের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আগামী বছর জুন থেকে আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন থেকে নিবন্ধন দেওয়া পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে আগামী অক্টোবর থেকে পরবর্তী বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে আগামী বছর জুলাই থেকে সময়সূচি ঘোষণার পূর্বে, এমনকি ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ইসির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, জেলা পর্যায়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্রিফিং, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রশিক্ষণ এবং মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রেরণ।

আর নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে রোডম্যাপে। এর মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভিযোগ প্রাপ্তি, মনোনয়নপত্র দাখিল, ভোটকেন্দ্র ও ভোটার নাম্বার প্রদান এবং ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করা। নির্বাচনী প্রচারে সব সময় ক্ষমতাসীনরা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে যাতে সমান সুযোগ পায়, সেজন্য প্রেস ও টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইসি নিজ উদ্যোগ নেবে। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি কম ছিল। ফলে ওই নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিদেশিরা প্রশ্ন তুলেছিল। এবার যাতে এ ধরনের প্রশ্ন না ওঠে, সেই লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পর্যবেক্ষক নিয়োগে তৎপর থাকবে ইসি। এর জন্য আগে থেকে পদক্ষেপ নেবে কমিশন। আর নির্বাচনকে কারচুপি এবং অবৈধ ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত রাখতে আইনানুগভাবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে যুক্ত করা হবে।

ভোটাররা যাতে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ, ভোটকেন্দ্রে গমন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে একটি কার্যকর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচনী মালামাল সচিবালয় আলাদাভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কমিশন সচিবালয় তা তদারকি করবে- এ ধরনের বিধান রাখা হয়েছে নির্বাচনী রোডম্যাপে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist