নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাজারের বিকল্প ‘গোশত সমিতি’

বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে বাহারি সব খাবার। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়ানো। স্বজনরা বাড়িতে এলে আপ্যায়ন করা। ঈদ উপলক্ষে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো মাংসের চাহিদা বেশি থাকে। আর এই সুযোগটাই লুফে নেয় খামারি এবং মাংস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের আগে বেড়েছে সব ধরনের মাংসের দাম। ঠিক এই সময় কিছু মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে ‘মাংস সমিতি’।

মাংসের বাজারের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যতিক্রমী ‘গোশত সমিতি’। রমজানে গরুর মাংসের অতিরিক্ত দাম থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাংস সাময়িক বয়কটের ঘোষণা দেয় কেউ কেউ। যা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। পরে বাজারের বিকল্প হিসেবে ‘গোশত সমিতি’ গড়ে তোলার পরামর্শ দেখা যায় সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। ঈদে আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে এসব সমিতি।

বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারে সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি মানভেদে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। গরুর মাংসের দাম আরো বেড়ে ৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের কারণে বাজারে মাংসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এই সুযোগে খামারিরাই গরু ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭৫, সোনালি মুরগি ২৬২ এবং গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এমন দামে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেছেন, বেশির ভাগ জায়গায় গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে কেউ কেউ ৮০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন। এখন বেশির ভাগ মুরগি করপোরেট গ্রুপগুলোর, তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবি করেছেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকটে মুরগির বাচ্চা কিনতে না পেরে উৎপাদন থেকে বাধ্য হয়ে সরে যাচ্ছে প্রান্তিক খামারিরা। ফলে বাজারে মুরগির দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

অস্থির বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। মৌলিক চাহিদা পূরণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মাংসের চিন্তা তো দূরের ভাবনা। এ অবস্থা মাংসের চাহিদা পূরণ করতে পাড়া-মহল্লায় সাড়া ফেলেছে ‘গোশত সমিতি’। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এ ধরনের মাংসের সমিতি গঠন করা হয়। মাংস সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন আগেই এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ঈদের আগে গ্রামে ফেরা চাকরিজীবী এবং গ্রামবাসীরা মিলেও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি পশু কিনে ফেলেন। এরপর পশুটি জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন। খরচ অনুযায়ী সদস্যরা টাকা ভাগ করে নেন।

ঢাকার জেলার আমুলিয়ায় ‘গোসত সমিতির’ উদ্যোক্তা আবু তাহের। তিনি বলেন, সমিতিতে সদস্য সংখ্যা শতাধিক। প্রতি মাসে সদস্য প্রতি ৩০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে রোজার ঈদের আগে জমানো টাকা দিয়ে গরু কিনে জবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি হয়। কেউ চাইলে সমিতিতে একাধিক নামও দিতে পারেন। এতে মাংসের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close