নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদবাজার

জাল টাকায় কেনাকাটা আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর মার্কেটগুলোয় বেচাকেনা জমে উঠেছে। বেচাকেনা ঘিরে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রেতা সেজে দোকানে ভিড় দেখে কৌশলে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে চক্রটি। আর এসব জাল টাকা ধরাও পড়ছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জাল টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছেন, এ বছর প্রতিদিনই জাল নোট ধরা পড়ছে। কখনো ক্রেতার সামনে আবার কখনো ব্যাংকে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল।

রাজধানীর জোনাকি মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিক বলেন, ঈদ, পূজা কিংবা বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে জাল টাকা কারবারিরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত রমজানের চেয়ে এ বছর পাঁচ থেকে ছয়বার জাল টাকা পাওয়া গেছে। বেচাকেনার চাপে বা তাড়াহুড়োর মধ্যে তারা জাল টাকা দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক সময় এসব জাল টাকা ধরার উপায় থাকছে না। ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, জাল টাকা কারবারিদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সময় অভিযান চালায়। বিভিন্ন সময় জাল টাকা কারবারিদের গ্রেপ্তার ও বিপুল পরিমাণে জাল টাকা ও জালনোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, আগে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকা তৈরি করে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিত। বর্তমানে অধিকাংশ কারবারি তাদের কৌশল পাল্টে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় আস্তানা গেড়ে জাল টাকা তৈরি করছে। এসব কারখানা দুর্গম এলাকায় হওয়ায় অভিযান চালিয়েও খুব একটা সফলতা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর জোনাকি, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই অধিকাংশ দোকানে জাল টাকা ধরা পড়ছে। এতে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী পারভেজ সেখ বলেন, চক্রটি এমনভাবে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেয়, যা স্বাভাবিকভাবে বোঝার উপায় থাকে না। তারা অনেক সূক্ষ্মভাবে জাল টাকার কারবার করে। যখন সাধারণ ক্রেতাদের অনেক ভিড় তৈরি হয়। তখন চক্রের একাধিক সদস্য দোকানের স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রেখে জাল টাকা দিয়ে দেয়। ফলে ধরার সুযোগ থাকে না।

ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, জাল টাকা চক্রের কিছু নারী সদস্যও রয়েছে। তারা কেনাকাটার নামে দোকানের স্টাফদের বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখে। কিছু সময় আমাদের প্রচণ্ড বিরক্ত করে তুলে। এ ছাড়া তাদের পোশাক ও আচার-ব্যবহারও অনেক ভালো থাকে। ফলে জাল টাকার সন্দেহ থাকে না কিংবা চেক করার সুযোগ থাকে না।

এ বিষয়ে নিউ সুপার মার্কেট (দ.) বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান রনি বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করছি। মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাল টাকা পেলেই সমিতির অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ব্যবসায়ী মিরাজুল খান বলেন, সারা বছরই জাল টাকা পাওয়া যায়। তবে ঈদ মৌসুমে একটু বেশি পাওয়া যায়। জাল টাকা চক্রের সদস্যরা ধুরন্ধর। তারা একসঙ্গে কয়েকজন একটি দোকানে ঢুকে কেনাকাটা করে। টাকা দেওয়ার সময় স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখে, যাতে টাকা চেক করে রাখার সুযোগ কম থাকে।

তিনি বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ী ও স্টাফদের আরো সতর্ক করে তুলছি। কোনো কোনো ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন কিনছেন। তবে জাল টাকা প্রতিরোধে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি দুর্গম এলাকায় জাল টাকার কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় তিন কারবারিকে। এ সময় ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোন। অভিযানে জাল টাকার কারবারি চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ ফয়েজ আহমেদ রাসেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৩ হাজার টাকার জালনোট ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে বিভিন্ন মার্কেটে এসব জালনোট ছড়িয়ে দিত চক্রটি। বেচাকেনা সরগরম হওয়ায় খুব সহজেই এসব জাল নোট ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। পবিত্র রমজান মাস ও আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থে জালনোট কারবারিদের ধরতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close