নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ এপ্রিল, ২০২৪

নিমিষে পাল্টে ফেলা হয় আইএমইআই

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই মোবাইল ফোন ছিনতাই হচ্ছে। কয়েক হাত ঘুরে ও কারিগরি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এসব ফোন দ্রুতই আবার বাজারে ফিরে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে ফোনের অবস্থান ধরতে না পারে সেজন্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাল্টে দেওয়া হচ্ছে ছিনতাই করা ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর। ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিভিন্ন মার্কেটে ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ফোন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই তথ্য জানিয়েছে।

মোবাইল চোরাকারবারি ৪টি চক্রের মূলহোতাসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্যও জানিয়েছে র‌্যাব। গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৯০০টি স্মার্টফোন, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুল, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন হাফিজুর রহমান (৩৫), রনি আহমেদ ইমন (২৯), জসিম উদ্দিন (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), কামাল (৪০), বাপ্পি (২৯), আবিদ হোসেন সনু (৩৮), রবিন ভুইয়া (২১), আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), সুজন (২৯), দেলোয়ার (৩৩), আবদুর রহমান (১৯), রাজু (২৭), জিহাদ হোসেন (২৪), মুনাইম (৩৮), রাজু (৪৫) ও রফিক (৩৮)।

র‌্যাব জানায়, এসব মোবাইল ফোন স্বল্প দামে বিক্রি হয় বলে চাহিদাও বেশি। এই চক্রটি ২০ হাজারের বেশি আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করেছে। তারা ৫০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে এই মোবাইলগুলো বিক্রি করত।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা মূলত ৪টি চক্রে বিভক্ত হয়ে ৫-৬ বছর ধরে এই কাজ করছে। গ্রেপ্তার আবদুর রহমান, রবিন ভুঁইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে। পরে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে এসব ফোন বিক্রি করে দেয়।

এছাড়াও তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর কাছ থেকেও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন কম দামে নিকে থাকে। গ্রেপ্তার দেলোয়ার ও আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ২৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ১৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার আরিফুলের নেতৃত্বাধীন চক্রটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ১০৬টি স্মার্ট ফোন এবং ৫৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার আবুল মাতুব্বর নেতৃত্বাধীন চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ২৪টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ইমনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৫৪টি স্মার্ট ফোন এবং ৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।

মঈন জানান, চুরি ও ছিনতাই করা মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিং, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এই চক্র ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানায় র‌্যাব।

ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য মোবাইল ফোন বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ টেবিলে করে বিক্রি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব ফোন বিভিন্ন অপরাধীরা কিনে ও বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার দেলোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ এবং কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেলোয়ারের সহযোগী রাজু ও জিহাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তার অপর মূলহোতা আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানায় মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল এর আগেও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে। পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আগের পেশায় ফিরে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close