আল-আমিন মিয়া, নরসিংদী

  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চালাকাচরের বাজার

চার ঘণ্টায় ২০ লাখ টাকার কলা বিক্রি

হাট বসে মাত্র চার ঘণ্টার জন্য। তাও আবার সপ্তাহে দুদিন। প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার। এই হাটে বিক্রি হয় শুধু কলা। নরসিংদীর মনোহরদীর চালাকাচর বাজারে এই কলার হাট বসছে ৫০ বছর ধরে। আর ওই হাটে কলা বিক্রি হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার। যে দিন হাট বসে সে দিনই এত টাকার কলার বেচাকেনা হয়। বিক্রেতাদের দাবি- এই কলাতে কোনো ‘কেমিক্যাল বা বিষ’ মেশানো হয় না।

বাংলাদেশের মধ্যে সুস্বাদু কলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলা। সাগর, অমৃত সাগর, চাম্পা বা চিনিচাম্পা, হোমাই অর্থাৎ সমাই, গেরাসুন্দর ও সবরি কলাসহ প্রায় ১০ প্রকার কলার চাষ হয় নরসিংদীতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার চাষ করা হয়, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। এছাড়া জেলার পলাশ, শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায়ও কলার চাষ হয় ব্যাপক। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফল বা ফসলের মধ্যে, গম, ধান ও ভুট্টার পরেই কলার স্থান। দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন কলার চাহিদা বাড়ায়, বেড়ে চলেছে কলার উৎপাদন। রপ্তানির তালিকায় ২০১২ সালে যুক্ত হয় নতুন পণ্য কলা। সেই বছর বাংলাদেশ ২০ হাজার কেজি সাগর কলা পোল্যান্ডে রপ্তানি করে। যার রপ্তানি মূল্য ৭ হাজার ২৫৫ ইউএস ডলার। রপ্তানিতে নরসিংদীর সাগর কলা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বাংলাদেশের সামনে।

এছাড়া দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকাচর বাজারের ঐতিহ্যবাহী কলার হাট। সপ্তাহে দুদিন বসে এ কলার হাট। প্রতি হাটে চার ঘণ্টায় বিক্রি হয় প্রায় ২০ লাখ টাকার কলা। এ অঞ্চলের কলার সুনাম থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বিষমুক্ত কলা কিনে নিয়ে যান। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে চালাকচর বাজারে সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সোমবার সকাল ৬টা থেকে বসে এ হাট। পুরোদমে বেচাকেনা চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত।

মনোহরদীর চালাকচর, হাতিরদীয়া, গড়বাড়ী, মানিকপুর ও সোলমানিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষক তাদের বাগানের কলা এ হাটে এনে বিক্রি করেন। কাকডাকা ভোর থেকে রিকশা ও ভ্যানে করে সাগর, চিনিচম্পা, সবরিসহ বিভিন্ন জাতের কলার কাঁদি এনে সারি সারি রাখা হয় হাটে। এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর কষাকষি করে কলা বিক্রি করেন চাষিরা। জাত ও আকারভেদে এ হাটে কলার প্রতি কাঁদি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা চালাকচর হাটে কলা বিক্রি করতেন। দূর-দূরান্ত থেকে হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসায় কৃষকরা ভালো দামও পান। দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এ কলার হাটে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। হাটে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। হাটটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতসহ হাটের আকার বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ক্রেতা আরিফ সর্দার বলেন, যশোর থেকে এ হাটে কলা কিনতে আসেন তিনি। সপ্তাহের দুদিনই তিনি এখান থেকে কলা কিনে ঢাকার বিভিন্ন আড়তসহ যশোর নিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, এখানকার কলা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।

মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুনা আক্তার বলেন, এবার শুধু মনোহরদী উপজেলাতেই প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হাট ছাড়াও জেলায় ছোট-বড় আরো বেশ কয়েকটি কলার হাট রয়েছে। এখানে বিক্রি হয় জেলার বিখ্যাত অমৃত সাগরসহ বিভিন্ন জাতের কলা। কলার আবাদ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয় বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close