উজ্জ্বল নাথ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)

  ১৯ জুন, ২০২২

মাছের ডিম আশানুরূপ মিলছে না হালদায়

নৌকা জাল নিয়ে তৎপর পাঁচ শতাধিক সংগ্রহকারী

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে তৃতীয় দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে তৃতীয় দফায় ডিম ছাড়লেও আশানুরূপ ডিম মিলছে না। আশানুরূপ সংগ্রহ করতে না পেরে ডিম সংগ্রহকারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলে রাতে নদীতে ঢলের প্রকোপ শুরু হয়। রাত ১২টার পর নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। তবে ওই সময় নদীতে ডিম সংগ্রহকারীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। গত শুক্রবার ভোর থেকে নদীতে প্রায় ২০০ নৌকা, ভেলা ও জালসহ পাঁচ শতাধিক সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ শুরু করলেও ডিমের পরিমাণ কম বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারীরা। জানা যায়, নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট, ছিপাইরঘাট, কাগতিয়ার টেক, মাছুয়াঘোনা, আজিমার ঘাট, নাপিতের ঘাট প্রভৃতি স্থানে মা মাছ ডিম ছাড়ে। সংগৃহীত ডিম মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারী মদুনাঘাট ও গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার হ্যাচারিতে ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য কাজ শুরু করে।

হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে পরদিন শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৮ নৌকায় ১২ বালতি ডিম সংগ্রহ করা হয়। তবে অনেকে প্রতি নৌকায় আধা বালতি থেকে এক বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে ১৬ মে ভোরে প্রথম দফায় হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সেদিন রাতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।

দক্ষিণ মার্দাশা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত দুইটি নৌকায় চার বালতির মতো ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, গভীর রাতে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। নদীর উপরিভাগের দিকে সংগ্রহকারীরা ডিম পেলেও নিচের দিকে তেমন ডিম মিলেনি। এখনো নদীতে সংগ্রহকারীরা আছেন। তবে যারা ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তারা ডিম নিয়ে হ্যাচারিতে গেছেন। আরো কিছু ডিম মিলতে পারে বলে আশা করছেন হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযানের কারণে এ বছর হালদা নদী সবচেয়ে বেশি দূষণমুক্ত ও মা মাছগুলো নিরাপদ ছিল। তাই সবার আশা ছিল হালদা থেকে এবার সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা যাবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রকৃতি হালদা নদীর অনুকূলে আচরণ করেনি। কারণ ২২ বছরের মধ্যে এবার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। এবার জুন মাস শেষ হতে যাচ্ছে, এর মধ্যেও পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি মা মাছ। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি, হালদায় পাহাড়ি ঢলও নেই। এ কারণে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি।

তিনি বলেন, এখন মৌসুমের শেষ সময়। ভারী বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছেড়ে দেবে। এবারের পাঁচটি জো শেষ হয়েছে। আগামী ২৩ থেকে ৩০ জুন শেষ জো, তখন ডিম ছাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল ছাড়াই গত ১৬ মে প্রথম দফায় হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সেদিন রাতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়ে, তবে ওই দফায় সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ কিছুটা বেশি ছিল। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে প্রথম দুই দফায় ৩২০০ কেজির মতো ডিম আহরণ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close