রিয়াজ মুন্না, চবি

  ২০ মে, ২০১৯

চবিতে আনন্দমুখর ইফতার

রাহিমা প্রিয়া ও তাসনিম জাহান প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। একজন পড়ছেন প্রাণিবিদ্যায় অপরজন কম্পিউটার সায়েন্সে। তারা গত বছর ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বছর রমজানে তাদের পরীক্ষা চলছে। তাই বাড়ি যাওয়া হয়নি। প্রতিদিনই বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ইফতার করছেন। যদিও তারা এ ইফতারকে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসে করার সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ। তবে এ চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করাটা তাদের শিক্ষাজীবনকে নতুন একটি জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হলেও এখন তারা মানিয়ে নিয়েছেন। কেননা এমন অভিজ্ঞতা তাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থীর।

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে রমজানের প্রতিদিনই বসছে বাহারি স্বাদের ইফতারির মেলা। কোমল ঘাসের সবুজ গালিচায় হাজারো তরুণ-তরুণী ইফতারের মুহূর্তকে সামনে রেখে ঘটিয়ে থাকেন প্রাণের মেলবন্ধন। জাতীয় আর আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে ক্যাম্পাস সদাব্যস্ত থাকে মুহুর্মুহু মিছিল আর সেøাগানে, রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে অনেকটা ‘পান থেকে চুন খসলেই’ পরস্পরের ওপর হামলার ঘটনা যেখানে নৈমিত্তিক, সেই ক্যাম্পাসে রমজানে মাগরিবের আজানকে সামনে রেখে হররোজই নেমে আসে স্বর্গীয় শান্তি ও উৎসবের আমেজ। পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে তৈরি হয় এক শান্তির সমাজ। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের এই প্রিয় মুহূর্তে শরিক হয়ে অসাম্প্রদায়িকতার অনুপম দৃষ্টান্তও উপহার দিয়ে থাকে।

সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লে শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি হলের সামনেই ছোটখাটো ইফতারির দোকান বসে। আসরের পরপর সবাই ইফতারি কিনে আনে। অনেক সময় দেখা যায় রুমের অথবা ব্লকের ৬-৭ জন মিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে ইফতারসামগ্রী কিনে আনে। ইফতারির মধ্যে থাকে আলুর চপ, পেঁয়াজু, ডিমের চপ, বেগুনি, জিলাপি, শরবত, খেজুর, দই, বুন্দিয়া, বড়া, হালিমসহ নানা রকম ফল-ফলাদি। আগে থেকেই সবাই ইফতারির মেন্যু তৈরি করে রাখে আজকের ইফতারিতে কী খাবে তারা। ইফতারি তৈরির ব্যাপারটায় বেশ আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। পেঁয়াজ-মরিচ, শশা আর পুদিনা পাতা কেটে ছোলাবুট এবং চপ দিয়ে মুড়ি বানানো। শরবত তৈরি করা, ইফতারির সময় কতটুকু বাকি আছে বা কখন আজান হবে তার খোঁজ নেওয়া, এই বুঝি ইফতারির সময় হয়ে গেছে। তাই হঠাৎ করে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়। ইশ, এখনো ইফতারি প্রস্তুত হয়নি! চুপি মাথায় কেউ কেউ ছোটবেলায় মসজিদ ও মাদরাসায় মুখস্ত করা দোয়াগুলো বারবার বলতে থাকে। তবে এর মধ্যে এমনও অনেকে থাকে যারা রোজা রাখেনি। কিন্তু তাদের বোঝার কোনো উপায় নেই। সবার চোখেমুখে পবিত্রতার ছায়া বিরাজ করে। ইফতারির এ আমেজ রমজান জুড়েই চলে। শাটলের ক্যাম্পাসখ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বাইরে চাকসু, জারুলতলা, লাইব্রেরি, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কলা ঝুপড়ি, সমাজবিজ্ঞান ঝুপড়ি, লেডিস ঝুপড়ি, ফরেস্ট্রি, স্টেশন চত্বর, সক্রেটিস চত্বর ও কেন্দ্রীয় মাঠে প্রতিদিন আসরের পর ইফতারির একটা রমরমা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ইফতার আয়োজনেও এমন চিত্র দেখা যায়। যদিও রমজানের মাঝামাঝি হতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা কমতে থাকে। তবু পরীক্ষা ও টিউশনির কারণে অনেকেই প্রায় ২৫-২৭ রমজান পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি জানিয়ে শিক্ষার্থী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, ক্যাম্পাসে ইফতার করায় আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগের থেকে আরো গাঢ় হচ্ছে। আমরা রোজা থেকে যে আত্মশুদ্ধি লাভ করছি, তার একটি হচ্ছে শত্রু-মিত্র বিভেদ দূর করে এক হয়ে দেশের পক্ষে কাজ করা। শিক্ষার্থী বুশরা জাহান বলেন, টিউশনির কারণে এ বছর রমজানে ক্যাম্পাসেই থাকতে হচ্ছে। সংযমের মাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করে। এতে পারস্পরিক সৌহার্দ্য আরো মজবুত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close