বেরোবি প্রতিনিধি

  ১৭ এপ্রিল, ২০১৯

‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন’

উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় গত ডিসেম্বর মাসে আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে আসা চারজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের অনুরোধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ভর্তি হতে এসেছিলেন। পাঁচ মাসেও ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি জানতে চাওয়ায় উপাচার্যের দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তারা বলেছেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন’।

ওই চার শিক্ষার্থী হলেন আহমেদ মুহাম্মদ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাস্টার্স), শাফি আহমেদ (সিএসই, অনার্স), আবদুল ফাতাহ (সিএসই, অনার্স) ও আবদুর রহমান (ফিন্যান্স, বিবিএ)। স্কলারশিপ হিসেবে টিউশন ফি ও আবাসিক সুবিধা পাওয়ার শর্তে প্রায় পাঁচ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতায় এখনো ভর্তি হতে পারেননি তারা। আর ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমালিয়ানরা।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসেন সোমালিয়ান এই চার শিক্ষার্থী। পরে বেরোবি উপাচার্যের অনুরোধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে রংপুরে আসেন। তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নম্বর কক্ষে অবস্থান করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পাঁচ মাস পরও ভর্তিকার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় তিন দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে আসা সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আহমেদ মুহাম্মদ। সেখানে তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ মুহাম্মদ বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পারসন। তিনি কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। অথচ আমাদের স্কলারশিপসহ পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। এখন রমজানের আগে নিজ দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে এ ধরনের আচরণ করা দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকা-ের জন্য বিশ্বব্যাপী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নম্বর রুমে গিয়ে দেখা যায়, ওই রুমে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বিদেশি চার শিক্ষার্থী। রুমটিতে কোনো সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। রুমের সামনে ময়লার স্তূপ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশায় পূর্ণ হয়ে ওঠে রুমটি। এ ছাড়া, রুমটি বেসিন, বাথরুম ও টয়লটের সঙ্গে লাগানো। প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ আসে সেখানে।

অন্য শিক্ষার্থী শাফি আহমেদ বলেন, আমাদের যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমে পশুকেও রাখা হয় না। ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কিছু করতে পারবেন না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, তাদের ভর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স না আসায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। আবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এটি একাডেমিক বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়টি দেখবে।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close