চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে উগ্রবাদীদের নতুন প্লাটফর্ম
রেডক্রসে কর্মরত ছিলেন জঙ্গি মুনতাসিরুল
চট্টগ্রামে সন্ধান মেলেছে ‘দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম’ ও ‘ইখোয়ান’ নামে জঙ্গিদের নতুন প্লাটফর্মের। দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আইএসকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করে তারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে হোয়াটস অ্যাপে ‘দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম’ ও ‘ইখোয়ান’ গ্রুপে যুক্ত থাকা জঙ্গিদের। গত শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার আনন্দবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সন্দেহে সাত যুবককে গ্রেফতারের পর শনিবার এ তথ্য জানায় র্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. মহিউদ্দিন তামিম, মো. আফজার হোসেন, মো. ইমরান খান, মো. দাউদ নবী পলাশ, চৌধুরী মোহাম্মদ রিদওয়ান, মো. মুনতাসিরুল মেহের ও এস এম জাওয়াদ জাফর। দাউদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়, অন্যদের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাদের মধ্যে মো. মুনতাসিরুল মেহের ২০১৫ সালে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন। এখন কক্সবাজারে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেডক্রসের (আইসিআরসি) ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। মহিউদ্দিন তামিম ২০১৭ সালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেন। আফজার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ইমরান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএস কোর্সে অধ্যায়নরত। দাউদ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করে প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডে কাজ করেন।
রিদওয়ান ২০১১ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ঢাকায় ভর্তি হন কিন্তু ২০১৩ সালে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কৃত হন। জাওয়াদ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ইয়ংওয়ান নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতার মহিউদ্দিন তামিম এবং মো. আফজার হোসেন নতুন প্লাটফর্মের সমন্বয় করতেন। বিদেশে সমন্বয়কারী হিসেবে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিডাল। সংগঠনের সদস্যদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দেন ইবনে মোস্তাক। সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সবাই আইটি বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। তারা অন্য জঙ্গি সংগঠনের মতো সামাজিকমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
হোয়াটস অ্যাপে ‘দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম ও ইখোয়ান নামের নামে দুটি গ্রুপে সক্রিয় থেকে জিহাদি ভিডিও ও বিভিন্ন দেশের মুসলিম নর-নারীদের ওপর নির্যাতনের ছবি প্রচার করে নিজেদের কথিত জিহাদের জন্য প্রস্তুত করছিল তারা। এছাড়াও তারা জঙ্গি সংগঠন আইএসকে অনুসরণের চেষ্টা করে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের প্রায় ১০০ সদস্য রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী কিংবা পাস করা ছাত্র। তাদের মধ্যে অনেকে আবার দেশের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত আতরজান জামে মসজিদে ইবনে মোস্তাকের সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় হয় এবং তারা মোস্তাকের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ও এ দেশীয় সমমনা জঙ্গিদের একত্র করে নাশকতামূলক কর্মকান্ড করার কাজে লিপ্ত ছিল। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে।
"