সম্পাদকীয়

  ০৪ জুন, ২০২০

জীবনটাই আগে পরে অন্যকিছু

করোনাভাইরাস কেন এলো—এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা আজ জরুরি হয়ে পড়লেও সেদিকে বিশ্ব মোড়লদের কোনো উদ্যোগ নেই। সেই সঙ্গে উদ্যোগহীন হয়ে পড়েছে সভ্য মানুষ। করোনা মহামারির বৈশ্বিক সংকটেও উন্নত দেশসমূহের মধ্যে একে অপরকে বাণিজ্যযুদ্ধে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতা আরো প্রকট করে তুলেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই প্রতিযোগিতার ফলেই যে এই ভাইরাসের আবির্ভাবএ কথা আজ অনেকের মুখেই প্রতিদ্বন্দ্বিত হচ্ছে। তারা বলছেন, পুঁজির অনৈতিক আচরণের কারণে জন্ম নিয়েছে এই করোনাভাইরাস।

লাগামহীন মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতায় আমরা ধ্বংস করেছি আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। ভূপৃষ্ঠে প্রকৃতিই যে আমাদের প্রথম প্রতিবেশী, সে কথা মনে রাখার কোনো প্রয়োজন অনুভব করিনি। দাম্ভিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ হাতের মুঠোয় ধরতে চেয়েছে গোটা বিশ্বকে। শাসন করতে চেয়েছে পৃথিবী ও তার পরিবেশকে। কিন্তু তা যে মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়, করোভাইরাস তা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করেছে। গোটা বিশ্বই আজ একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন সেলের মধ্যে থাকতে হচ্ছে প্রতিটি মানুষকে। ধ্বংস হয়েছে অর্থনীতির প্রতিটি শাখা-উপশাখা। ভবিষ্যতের কথা ভাবলে শিহরিত হয়ে উঠছে মানবসভ্যতা। এর পরও ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করেনি। করার কোনো লক্ষণও চোখে পড়ছে না।

আমরা জানি, অর্থনীতি ভেঙে পড়লে সমাজ কাঠামোর অনেক কিছুই ভেঙে পড়ে। বিশ্ব অর্থনীতির যখন ভঙ্গুর অবস্থা, তখন তার কিছুটা আমাদেরও বহন করতে হবে এবং হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই এখন অনিশ্চয়তার গহ্বরে কালাতিপাত করছেন। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে পাঠদানে কমবেশি উদ্যোগ চলছে। কিন্তু দেশের সর্বত্র অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো কতটা আছে, বিশেষত গ্রাম বা মফস্বলে ইন্টারনেট পরিষেবা কতটা ভালো, স্মার্টফোনইবা কজন শিক্ষার্থীর হাতে আছেএ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশের সব প্রান্তের সবাই কি অনলাইন পাঠের সুযোগ পাচ্ছে! বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো ও আর্থিক কারণে যাদের হাতে সাইবার প্রযুক্তি নেই, এ ব্যবস্থায় তারা যে বঞ্চিত হচ্ছেন; সে ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি তাদের সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্পও গড়ে উঠেনি।

এদিকে করোনা সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দীর্ঘসময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এ মুহূর্তে তা অনুমান করা খুবই কঠিন। এ ছাড়া ভাইরাস প্রকোপের কারণে এইচএসসি পরীক্ষাও নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। কবে হবে, তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীরা এখন সেশনজটের আশঙ্কায়। আর এর সবটাই হচ্ছে কঠিন বাস্তবতা। যা আমাদের মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। বিকল্প কোনো পথের কথা আমাদের জানা নেই। মনে রাখতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবনটাই সবার আগে। একে রক্ষা করাই হবে প্রধান কাজ। কেননা, জীবনটাই আগে, পরে অন্যসব।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,জীবন,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close