অনুবাদ : মুম রহমান

  ২৩ আগস্ট, ২০১৯

নারীর লেখা নারীবাদী কবিতা

স্বর্ণ সাফো

স্বর্ণ হলো দেবতার শিশু;

পোকা কিংবা

প্রজাপতি খায় না স্বর্ণ, এটা

অনেক শক্তিশালী

পুরুষের হৃদয়ের চেয়েও।

পুরুষ হওয়ার অবচেতন ইচ্ছা এডনা সেন্ট ভিনসেন্ট মিল্যে

আমার ছিল ছোট্ট বিষাদ

জন্মেছে ছোট্ট পাপ থেকে,

আমি পেয়েছিলাম স্যাঁতসেঁতে ঘর মনমরা

আর বন্দি করেছিল আমাদের সবাইকে;

আর, ‘ছোট্ট বিষাদ, কাঁদো’, আমি বলেছিলাম

‘আর ছোট্ট পাপ, ঈশ্বরের কাছে মৃত্যুর প্রার্থনা করো,

আর আমি মেঝের ওপরে শুয়ে ছিলাম

আর ভাবতাম কী বাজে অবস্থাতেই না আমি আছি!’

হায়রে আমার পুণ্য পরিকল্পনা—

এর কণা পরিমাণ মূল্যও নাই!

যতক্ষণ না বিষাদ সেই ঘরে এসেছিল,

আলোটি হয়তো জ্বলছিল!

আমার ছোট্ট বিষাদ হয়তো কাঁদেনি,

আমার ছোট্ট পাপ হয়তো ঘুমাচ্ছিল—

আমার আত্মাকে সঞ্চয় করে রাখতে পারিনি

আমার অমার্জিত মনের ওপর!

তাই সর্বাগ্রে আমি রাগে জ্বললাম,

আর একটা বই তুলে নিলাম,

আর আমার চুলের একটা ফিতা বাঁধলাম

এক গমণোদ্যোত বালককে খুশি করতে।

আর, ‘একটা ব্যাপার হলো পার হওয়ার কোনো সুযোগ নাই—

আমি একটি দুষ্টু মেয়ে ছিলাম’, আমি বললাম;

কিন্তু আমি যদি দুঃখিত হতে না পারি, কেন

তেমন আনন্দিতই বা আমি হব!’

তুমি ভেবেছিলে আমি সেই ধরনের আনা আখমাতোভা

তুমি ভেবেছিলে আমি সেই ধরনের:

যাকে তুমি ভুলে যাবে

আর আমি অনুনয় করে যাব আর কেঁদে যাব

আর নিজেকে ঘোড়ার খুরের তলে নিক্ষেপ করব,

কিংবা কোন জাদুকরকে বলব

শেকড় বাকর দিয়ে কোন মায়াবী মিশ্রণ বানাতে আর পাঠাব তোমাকে

উৎকট উপহার হিসাবে:

আমার মূল্যবান সুগন্ধি রুমালে।

ধিক্কার তোমাকে! আমি গ্রহণ করব না তোমার অভিশপ্ত আত্মা নাকি কান্না কিংবা একটা কটাক্ষও।

আর আমি তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি স্বর্গীয় বাগানের নামে,

আমি প্রতিজ্ঞা করছি অলৌকিক কার্যক্ষম প্রতিমার নামে,

আর রাত্রির আগুন ও ধোঁয়ার নামে:

আমি কখনো তোমার কাছে ফিরে আসব না।

রুপালি গারদ মারি ইভান্স

‘ও আমি এক ক্রীতদাস

এবং আমিই আমার প্রভু

একই সঙ্গে

উভয়েই বন্দি

এবং স্বাধীন।’

আমার কবিতা নিকি জিওভান্নি

আমার বয়স ২৫

কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা কবি

একটা কবিতা লেখেছি জিজ্ঞেস করে

নিগ্রো তুমি কি হত্যা করতে পারো

যদি ওরা হত্যা করে

এটা থামবে না

এই বিপ্লব

আমার ছিনতাই হয়েছে

মনে হয় এটা তারা জানতো

যে আমাকে আঘাত করা হবে

তারা আমার টিভি নিয়ে গেছে

আমার দুটো আংটি

আমার আফ্রিকান ছাপশিল্প

আর আমার দুটো বন্দুক

যদি ওরা আমার জীবন নেয়

এটা থামবে না

এই বিপ্লব

আমার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে

আমার মেইল খোলা হয়েছে

তারা আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে

আমার সব পুরোনো বন্ধুর থেকে

আর আমার সব নতুন প্রেমিক থেকে

আমি যদি সব কৃষাঙ্গদের ঘৃণা করি

সবাইকে

আর সব নিগ্রোদের

এটা থামবে না

এই বিপ্লব

যদি আমি কখনো না লিখি আর

একটিও কবিতা

অথবা ছোটগল্প

যদি আমি অকৃতকার্য হই

শহরের স্কুলে

যদি আমার গাড়ি ফেরত চাওয়া হয়

আর আমার রেকর্ড প্লেয়ার

যদি আর না বাজে

আর যদি আমি কখনো না দেখি

একটি শান্তিময় দিন

কিংবা করতে পারি অর্থময়

কৃষ্ণ কিছু

এটা থামবে না

এই বিপ্লব

এই বিপ্লব

আছে পথে পথে

আর যদি আমি রয়ে যাই

পাঁচ তলাতেও

এটা চলতেই থাকবে

যদি আমি কখনো না করি

কিছুই আর

এটা চলতেই থাকবে।

পাখিটি স্রেফ একটি পাখি ছিল ফোরাহ ফারুখজাদ

পাখিটি বলেছিল:

‘কী উজ্জ্বল একটা দিন, কী তরতাজা বাতাস!

বসন্ত এসে গেছে।

আমি অবশ্যই আমার সঙ্গীর খোঁজ করব।’

পাখিটি উড়ে গেল তারের প্রান্ত থেকে।

পাখিটি উড়ে গেল মেঘের দিকে—

আর দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল।

ঠিক একটা আকাঙ্ক্ষার মতো,

ঠিক একটা প্রার্থনার মতো,

ঠিক একটা ফিসফিসানির মতো,

পাখিটি বিস্তৃত হলো দূরে আর দিগন্তে—

বাতাসে।

পাখিটি ছোট্ট ছিল।

পাখিটি হালকা ছিল।

পাখিটি উজ্জ্বল ছিল না।

পাখিটি একা ছিল,

কিন্তু পাখিটি, ভালো,

যথার্থ স্বাধীন ছিল।

আকাশে,

পাহাড় আর পথের ওপরে আর নিচে,

ট্রাফিক আলো আর ‘থামুন’ সাইনবোর্ডের ওপরে

পাখিটি ক্রমাগত উড়েছিল।

আর তার স্বপ্নের শান্তির চূড়ায়,

সে অবশেষে অনুভব করেছিল সময় আর মহাশূন্যকে।

পাখিটি, বেশ, স্রেফ একটি পাখি ছিল। পাখিটি, বেশ, যথার্থ মুক্ত ছিল।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নারীর কবিতা,নারীবাদীর কবিতা,মুম রহমান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close