কুতুবউদ্দিন আহমেদ

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আবার মুগ্ধতা বেকু মামা’য়

‘বেকু মামা’ একটি কিশোর সিরিজ; তুমুল জনপ্রিয়; লেখক কথাসাহিত্যিক হাসান মোস্তাফিজুর রহমান। কিশোর সিরিজ হলেও বিষয়টি বড়দের জন্যেও সমান উপভোগ্য। তাই এতদিনে সিরিজটি ছোট-বড় সকলের মধ্যে একটি আগ্রহের জায়গা করে নিয়েছে। সিরিজটির এবারের শিরোনাম ‘গুপ্তধন অভিযানে বেকু মামা’। বেরিয়েছে দেশের অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে।

বরাবরের মতো এবারো বেকু মামা ও তার অতি আদরের ভাগ্নে হাবুলকে নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গেছে। অসম বয়সী হলেও তাদের সম্পর্ক গভীর এবং একইসঙ্গে অম্লমধুর। সারাক্ষণ তারা একে-অপরের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে আছে। এই তাদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় আবার এই হয় তো ভালোবাসার মাখামাখি। এককথায় চরিত্র দুটি বেশ উপভোগ্য।

এবারের ঘটনাটি সাজেকের গহীন জঙ্গলে গিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার অভিযানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। আমরা জানি, সাজেক বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠ লীলাভূমি; যার নান্দনিক সৌন্দর্য প্রতিটি সৌন্দর্যপিপাসুকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে।

গুপ্তধন অভিযানের পরিকল্পনাটি অভিজ্ঞ ও প্রবীণ ব্যক্তি নানাভাইয়ের। তিনি বিশেষ এক গবেষণায় জানতে পারেন, সাজেকের গহীন জঙ্গলে আছে এক প্রাচীন ভগ্ন মন্দির; যেখানে প্রতিদিন নরবলি দেওয়া হতো; মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে অনেককাল থেকে। কিন্তু পড়ে থাকলে কী হবে; সেই মন্দিরে রক্ষিত আছে মহামূল্যবানসব রত্নসামগ্রী; যার অর্থমূল্য হিসেব করলে দাঁড়াবে কোটি কোটি টাকা। এই মহামূল্যবান রত্নসামগ্রী উদ্ধার করতে হবে অতি সাবধানে। কিন্তু এ-তো ছোট-খাটো দায়িত্ব নয়; দায়িত্বটা কে নেবে? মৃত্যুভয় যেখানে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে?

দায়িত্ব গিয়ে পড়ে সাহসী পুরুষ বেকু মামা ও তার প্রিয় ভাগ্নে হাবুলের ওপর; সহযোগী হিসেবে কাজ করে সুঠামদেহী ও দুর্নিবার জগলুল। জগলুল বাইরের কেউ নয়; নানাভাইয়ের কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান। খুব ছোটবেলা থেকে তাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করা। নিজের না হলেও জগলুলকে তিনি মানুষ করেছেন নিজের সন্তানের মতো; সামান্য অবহেলা ছিল না।

অভিযানটির অন্যতম নিয়ামক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিকারী পাখি থান্ডার; অতি কারিশম্যাটিক শিকারী পাখি। সে এক বিশ্বস্ত পাহারাদার; জল, স্থল ও অন্তরীক্ষের অতন্দ্র প্রহরী। বেশ ক’বার অভিযাত্রীদের সমূহবিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

অভিযানটির পদে পদে রয়েছে গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। একে তো মন্দিরটি পড়ে আছে গহীন জঙ্গলে। কিন্তু জঙ্গলের সে জায়গাটি আসলে কোথায়, বিষয়টি কারো ঠিক জানা নেই। সবই অনুমান, সম্বল কেবল একটি অতি প্রাচীন ম্যাপ। এই ম্যাপটি ধরে ধরে বুকে সাহস নিয়ে ত্রস্তপায়ে এগিয়ে যাওয়া। রাস্তা-ঘাট নেই; দিকচিহ্নহীন বনের ভেতর দিয়ে কখনো গভীর জঙ্গল, কখনো সুউঁচু পাহাড়, কখনো জলা, রোদ-বৃষ্টির দাপট কতশত বিপদ! পদে পদে যেন ভয় আর মৃত্যুর কুহেলিকা এসে সম্মুখে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমস্ত বনজুড়ে রয়েছে হিংস্র প্রাণীর অশুভ পদচারণা। এই হয় তো ভয়ংকর বাঘ, নয় তো বিশালদেহী ট্রেনের মতো অজগর সামনে এসে মুখ হা করে দাঁড়ায়।

সামান্য অসতর্ক হলেই হিংস্র শ্বাপদের মুখের গ্রাসে পরিণত হতে হবে। এমন একটি ভয়ংকর দৃশ্য লেখকের জবানীতে তুলে ধরা যাক—‘অজগর! অজগর!’ বলে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে কাঁধে ঝোলানো ট্রাঙ্কগুলো মাটিতে ফেলে দিলেন কুলিরা। তারপর দৌড়ে পেছন দিকে চলে গেলেন সবাই। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছেন বিশাল অজগর সাপটার দিকে। আমিও সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে আছি ওটার দিকে। প্রচণ্ড ভয়ে বুকের ভেতরটা গুড়গুড় করছে। এত বড় অজগর!

এই গহীন বনে রাত এসে নামে আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। সন্ধ্যা নামতেই যেন ভয় আর অজানা আতঙ্কে গা শিরশির করে ওঠে। কান পাতলেই চারদিকে শোনা যায় প্রেতাত্মা, পিশাচ আর অশরীরি আত্মার কলরব।

এতসব বিপদ আর ভয় রীতিমত সাহসের সঙ্গে উপেক্ষা করেই বেকু মামার অভিযান সম্মুখে এগিয়ে যায়। মৃত্যুভয় তাদেরকে তাড়া করে ফেরে প্রতিনিয়ত কিন্তু বেকু মামার দুর্বার সাহস, কৌশল, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসের কাছে সকল অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটে। সফল সমাপ্তি ঘটে তাদের স্বপ্নের গুপ্তধন অভিযানের। গুপ্তধন নিয়ে তারা নিরাপদে বাড়ি ফেরে। সফল অভিযানের তৃপ্তি তাদের চোখে-মুখে।

গুপ্তধন অভিযানে বেকু মামা

হাসান মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশক : দি রয়েল পাবলিশার্স

প্রচ্ছদ : নুমান ফরিদী

মূল্য : ২৮০ টাকা

পিডিএসও/মীর হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাসান মোস্তাফিজুর রহমান,গুপ্তধন অভিযানে বেকু মামা,বই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close