চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অভিভাবকহীন মোমিনপুর স্টেশন

নেই যাত্রীসেবা, দোকানি ও জুয়াড়িদের দখলে স্টেশন

চুয়াডাঙ্গার ১০ স্টেশনের পাঁচটিরই কার্যক্রম আংশিক বন্ধ

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। দিনে চারবার ট্রেন আসা-যাওয়া করা পরও বেহাল স্টেশন। এটি পরিণত হয়েছে স্রেফ দোকান ও গাড়ি রাখার স্ট্যান্ডে। জুয়াড়ি ও বখাটেদের আড্ডা বসে নিয়মিত। স্টেশনটি ভুগছে অভিভাবকহীনতায়।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গার ১০টি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি স্টেশনের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রী ছাউনিতে বসতে পারেন না যাত্রীরা, রাখা হয় গরু। প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে চলাচল করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, তিন চাকার ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন। সারা দিন বখাটেদের আড্ডার সঙ্গে সন্ধ্যায় যুক্ত হয় জুয়াড়ির দল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোমিনপুর স্টেশন দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দা ও নকশিকাঁথা নামক দুটি ট্রেন আসা-যাওয়া মিলিয়ে চারবার থামে। নিয়মিত যাত্রীও আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু একজন স্টেশন মাস্টার এবং একজন গেটম্যান দিয়েই চলছে ব্যস্ত স্টেশনটি।

সরেজমিন দেখা যায়, ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন যাত্রীরা। প্ল্যাটফর্মের এক অংশে টিনের শেড থাকলেও রোদ বা বৃষ্টিতে নিজেদের বাঁচানোর উপায় পান না যাত্রীরা। টিন শেডের নিচে গোয়াল ঘর বানিয়েছেন কিছু প্রভাবশালী। প্ল্যাটফর্মে রয়েছে কয়েকটি মুদি দোকান ও সেলুন। এসব দোকানকে কেন্দ্র করেই চলে ক্যারাম খেলার দীর্ঘ আসর ও জুয়াড়িদের আড্ডা। প্ল্যাটফর্মের এক পাশ দখল করে অনেক আগেই গড়ে উঠেছে ভ্যান স্ট্যান্ড।

স্টেশনটির চারপাশ ফাঁকা। ফলে অবাধে যে কেউ স্টেশনে প্রবেশ বা বের হতে পারেন বলে জানান স্থানীয়রা। এ নিয়ে কথা হয় স্টেশন এলাকা বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. বদর উদ্দিনের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, স্টেশনের পাশের রাস্তার দুই পাশে হাট বসে। পাশের নীলমণিগঞ্জ, আমিরপুর, মোমিনপুর, বোয়ালমারী ও সরিষাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা এ হাটে কেনাকাটা করতে আসেন। এখনকার অনেক শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করেন। এ স্টেশন দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হয়। সব মিলিয়ে এ স্টেশনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেন না দাঁড়ানোর কারণে স্টেশনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমন অব্যবস্থাপনা। রাতে স্টেশনে বসে মাদকসেবীর আড্ডা।

বোয়ালমারী গ্রামের বাসিন্দা কাজল হোসেন বলেন, আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন এ স্টেশনে বিরতি দেয় না। সেজন্য এই এলাকার বেশির ভাগ যাত্রী বাস বা বিকল্প যানবাহনে যাতায়াত করেন। যশোর-খুলনা কিংবা রাজশাহী, কুষ্টিয়া বা গোয়ালন্দ যেতে হলে ১৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আলমডাঙ্গা থেকে, অথবা ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়।

মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্টেশনটিতে দিনভর খেলা-আড্ডা হয়। বসেছে চায়ের দোকান। মোটরসাইকেল চালানো হয় প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে। এসব ঠেকানো যায় না। কেউ কথা শোনে না। যার যা ইচ্ছা, স্টেশনে এসে তাই-ই করছে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু বলতে গেলে হুমকি আসে। স্টেশনের দায়িত্বে একমাত্র আমি। সঙ্গে আছেন একজন গেটম্যান। স্টেশনে লোকবল না থাকায় আমাদের কথা কেউ শোনে না।

চুয়াডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ১০টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে নানা কারণে পাঁচটিতে লোকবল বেশ কমিয়ে আনা হয়েছে। এ কারণে ওই পাঁচটি স্টেশনের কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close