রেজওয়ান শরিফ, টাঙ্গাইল

  ২০ আগস্ট, ২০১৯

টাঙ্গাইলের চামড়ার হাটেও মন্দাভাব

মন্দাভাব চলছে দেশের অন্যতম চামড়ার বাজার টাঙ্গাইলের পাকুটিয়া চামড়ার হাটে। চারদশক আগে ঘাটাইল উপজেলায় জমে উঠা এই হাটে কেনা দামের অর্ধেকে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছেন মৌসুমী ও পাইকাড়ি ব্যবসায়ীদের। টেনারি মালিকদের নিকট উপযুক্ত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে না পাড়ায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯৮১ সালে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়া এলাকায় জমে উঠে চামড়ার হাট। সপ্তাহে প্রতি বুধবার ও রোববার এখানে হাট বসে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হাটে পাশর্^বর্তী কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীরা এসে চামড়া কেনা-বেচা করেন। এছাড়াও মধুপুর, ধনবাড়ী, ভূঞাপুর, গোপালপুর উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রধান হাট এটি। অপরদিকে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা থেকে চামড়া বেচা কেনা করতে ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসে। সারা বছর এখান থেকে বিপুর পরিমাণ চামড়া টেনারিতে যোগান দেওয়া হয়। ফলে এই চামড়া হাটটি চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রতি বছর কোরবানির পর এই হাট থেকে দুই থেকে তিন লাখ চামড়া কেনাবেচা হয়। কিন্তু এ বছর তার অর্ধেকও হচ্ছে না।

গত রোববার পাকুটিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিও অনেক কম। সারা দেশের মধ্যে ১০-১২টি কোম্পানির প্রতিনিধি হাটে এসেছেন চামড়া কিনতে। অথচ এই সময়ে শতাধিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা ব্যাপক ব্যস্ত থাকেন চামড়া কেনায়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু এবার পুরোটাই উল্টো চিত্র।

কোম্পানীর প্রতিনিধিরা জানান, সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। স্থানীয়ভাবে চামড়া কিনতে হবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বর্গফুট। ওই দামে মধ্যসত্ত্বভোগীরা চামড়া বিক্রি করছেন না। তাদের চাহিদা মতো দামে চামড়া কেনে এবং এর সঙ্গে ট্রান্সপোর্ট, লবণ, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচও যুক্ত করলে প্রত্যেকটি চামড়া প্রতি আরো অতিরিক্ত প্রায় ২০০ টাকা খরচ পড়বে। অপরদিকে সময় মতো চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক লোন না পাওয়ায় চামড়া কিনতে বাধা গ্রস্থ হচ্ছেন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইউসুফ লেদার কর্পোরেশনের মালিক মো. ইউসুফ হোসেন জানান, প্রথম শ্রেণির গরুর চামড়া কিনতে এসেছেন। কিন্তু চামড়ার সঙ্গে দামের ব্যাপক তারতম্য থাকায় তিনি চামড়া কিনতে পারছেন না। একই রকম অভিযোগ করলেন মাসুদ ট্যানারির এজেন্ট ফরিদুজ্জামান, আর.কে লেদার কোম্পানির এজেণ্ট মো. মাসুম মিয়াসহ কয়েকটি কোম্পানির এজেন্ট।

কালিহাতীর বল্লা থেকে আসা চামড়া বিক্রেতা রাধু বলেন, ব্যবসায়ীরা একেকটি চামড়ার দাম হাকছেন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। যা কেনা দামের চেয়ে অনেক কম। আবার চামড়ার মধ্যে লবণ দিতে হয়েছে। শ্রমিক খরচ আছে। এত লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করলে মাথায় হাত পড়বে।

এদিকে পাকুটিয়া চামড়া হাটের ইজারাদার হুমায়ুন ও রফিক জানান, চামড়ার বাজারে ধস নামায় তারাও বিপাকে পড়েছেন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া আমদানি-রপ্তানী না হলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ হব। যে টাকা দিয়ে ইজারা নিতে হয়েছে সেই টাকা উঠানোই দায় হয়ে পড়বে। এটা চামড়া শিল্পের জন্য অশনি সংকেত।

জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, টাঙ্গাইলের পাকুটিয়ার চামড়া হাটেও ব্যবসার মন্দাভাব চলছে। ইতিমধ্যে সরকার চামড়া শিল্পকে রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা সে বিষয়টি বাস্তবায়ন করবো। ঈদের পর এটাই প্রথম চামড়ার হাট। আমরা যে কোন সমস্যায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close