সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ১১ জুন, ২০১৯

বিনা বেতনে ১০ বছর ধরে শালবন পাহারা

নওগাঁর ধামইরহাটে প্রায় ১০ বছর ধরে বিনা বেতনে শালবন ও জাতীয় উদ্যান পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন ১২ গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ২৪ জন। উপজেলার আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে এই সংরক্ষিত শালবন অবস্থিত।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ কর্তৃক ১২টি সমিতির ৬ মহিলাসহ ২৪ জনকে শালবন ও আলতাদিঘী দেখাশুনার জন্য সম্পৃক্ত করেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে এনজিও ‘পদক্ষেপ’ তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেন। ইতিমধ্যে ২০১১ সালে আলতাদিঘীকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ‘পদক্ষেপ’ তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার পরও এলাকার স্বার্থে ওই ২৪ পাহাড়াদার আজো বনের দেখাশুনা, আলতাদিঘীর মাছ গভীর রাতে পাহারা দেওয়া, শালবন দেখাশুনা, জাতীয় উদ্যানে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কাজে সহযোগিতা করে আসছিলেন।

বন পাহারায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) বা কমিউনিটি বন পাহারাদলের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম ও সম্পাদক ফিরোজবাবু জানান, আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান ঘোষিত হবার পরে ২০১২ সালে কক্সবাজারে বন পাহারায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘এক্সপোজার ভিজিট’ কার্যক্রমে ৭ দিনের শিক্ষামুলক প্রদশর্ণীতে অংশ গ্রহণ করি। এর আগে ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা যথাক্রমে আবুল বাশার মিয়া ও অজিদ কুমার রুদ্র ধামইরহাটে আকস্মিক সফরে এতে আমাদের উদ্যান এলাকায় কর্ম সংস্থানের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত কোন বেতন-ভাতা পাইনা, স্থায়ীকরণ হবে এই আশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

আলতাদিঘী সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সভাপতি মুশফিকুর রহমান জানান, জাতীয় উদ্যান ও শালবন এলাকার জয়জয়পুর, মইশড়, মোল্লাপাড়া, আলতাদিঘী, দাদনপুর, খয়েরবাড়ী, অমরপুর, বাখরপুর, শেখায়পুর উত্তর চকযদু (খড়ডাঙ্গা)সহ প্রায় ১২টি গ্রামের ‘জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুনুরদ্ধার’ নামক ১২টি সমিতির প্রত্যেকটিতে ২ জন করে মোট ২৪ জনের সমন্বয়ে পিপলস ফোরাম ও বনবিভাগের সমন্বয়ে বন পাহারাদল তৈরী করা হয়। এখনো তারা বিনা পারিশ্রমিকে সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, ২০০৯ সালে আগত আরণ্যক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বেসরকারী সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ ১২টি সমিতিতে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা এককালীন (রিভলবিং ফান্ড) প্রদান করেছে, এছাড়া আরও কোন উন্নয়ন তাদের জন্য কেউই করেনি।

উপজেলা বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উপরোক্ত ২৪ জনকে তাদের সমিতির মাধ্যমে এনজিও পদক্ষেপ বন পাহারার কাজে সম্পৃক্ত করেছেন এবং পদক্ষেপ এনজিও কিছু অর্থ পাহারা কাজের নিয়োজিত সিপিজি’র সমিতিতে দিয়েছেন। এখন তাদের নিয়মিক পারিশ্রমিক প্রদানের ক্ষেত্রে বনবিভাগের সঙ্গে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান এলাকায় হাজার পর্যটক, দর্শনার্থীদের আগমন, তাদের সার্বিক নিরাপত্তা, বনের শৃঙ্খলা ও বন দেখাশুনায় তারা ১০ বছর যাবৎ নিয়োজিত। তাদের পরিবারের সদস্যদের ভালভাবে দুই মুঠো ভাত তাদের মুখে তুলে দেবার লক্ষ্যে কর্মরত ২৪ জনকে স্থায়ী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-নজর দেওয়া আশু জরুরি। এ জন্য আমি সরকারের উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমেদ নিয়ামুর রহমান জানান, ১০ বছর ধরে কারা জাতীয় উদ্যান ও শালবন দেখার দায়িত্বে আছে, কিভাবে আছে, কে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন তা আমার জানা নেই, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close