আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জ

  ১৫ মে, ২০১৯

কালোবাজারি ছাড়া মেলে না কিশোরগঞ্জে রেলওয়ে টিকিট

কিশোরগঞ্জে বাড়তি টাকা দিয়ে রেলের টিকিট কিনতে হয় সাধারণ মানুষকে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ দিন আগে কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা কোন টিকিট পান না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ দামে কালোবাজারীদের হাত থেকে টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এতে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। স্থানিয়দের অভিযোগ রেলওয়ে পুলিশ ও স্টেশন মাস্টারের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে টিকিট কালেবাজারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে চিহ্নিত টিকিট কালোবাজারীর সংখ্যা ৭ জন। এরা হচ্ছেন শাহীন মিয়া, গোলাপ মিয়া, সাবু মিয়া, ছাইকুল মিয়া, পিপুল মিয়া, স্টেশন সংলগ্ন জীবন টেলিকমের মালিক জীবন মিয়া, স্টেশন প্লাটফর্মের স্বাগতম স্টোরের মালিক সজীব বাবু। তাদের মধ্যে জীবন টেলিকম অঘোষিত টিকিট কাউন্টার। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিটের গায়ে লেখা মূল্যের দ্বিগুন দামদিয়ে টিকিট কিনছে কয়েকজন যাত্রী। এতে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রী মাসুদ পারভেজ লিমন বলেন, আগামী ১০ দিন পর ঢাকা যাব তাই স্টেশনে আসলাম টিকিট কেনার জন্য। কিন্তু কাউন্টারে কোন টিকিট পেলাম না তাই বাধ্য হয়ে ব্লেকারের কাছ থেকে ১৪৫ টাকার টিকিট ৩০০ টাকা দিয়ে কিনলাম।

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আরেকযাত্রী ফার্নিচার ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান উজ্জ্বল আক্ষেপের সুরে বলেন, টিকিট না পাওয়ার ঘটনা নিত্য দিনের। প্রতি মাসে দুই তিনবার কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াত করি। কিন্তু কোন সময় কাউন্টারে টিকিট পেলাম না। যখনি টিকিট কিনতে আসি তখনি তাদের মুখ থেকে টিকিট নাই কথাটি শুনতে হয়। এজন্য এখন আর টিকিট কিনতে স্টেশনে আসি না, ব্লেকারের নাম্বার সেইভ করা আছে ওদেরকে ফোন দিলেই টিকিট ব্যবস্থা করে দেয়, যদিও টাকাটা দ্বিগুন লাগে। তারপরেও কোন উপায় না পেয়ে তাদের কাছেই যেতে হয়।

টিকিট কালোবাজারীর বিষয়ে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে টিকিট কালোবাজারী হওয়ার বিষয়টি তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘চিহ্নিত টিকিট কালোবাজারীরা সকলের বাড়ি স্টেশনের আশেপাশে হওয়ায় টিকিট না দিলে আমাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন। এমনকি বিভিন্ন সময় গালিগালাজও করে। তাই বাধ্য হয়ে কালোবাজারীদের টিকিট দিতে হয়। এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।’

টিকিট কালোবাজারীরা রেলওয়ে পুলিশের সামনেই স্টেশন প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে টিকিট বিক্রি করে। পুলিশের নীরব ভূমিকা সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টিকিট কালোবাজারী জানায়, রেলওয়ে পুলিশকে মাসে মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়েই আমরা টিকিট বিক্রি করি।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুর রহমান বিশ্বাস মুঠোফোনে টিকিট কালোবাজারীদের কাছ থেকে মাসে মাসে নির্দিষ্ট অংকের টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, আমি কর্মস্থলে যোগদানের পর কয়েকজন টিকিট কালোবাজারীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। বর্তমানেও অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, স্টেশন মাস্টার সাহেব চিহ্নিত কালোবাজারীদের তালিকা আমার কাছে যদি প্রেরণ করেন আমি সকলকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close