কুবি প্রতিনিধি

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ নেই বাস্তবায়ন

স্বপ্ন যখন বাস্তবে পূরণ না হয় তখন সে স্বপ্নকে দিবা স্বপ্ন বলাটা দোষের কিছু নয়। ঠিক এমনই দিবা স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। যার কারনে তার কাছে ঘেঁসতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাকে ‘ডাইনামিক উপাচার্য’ বলে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই বলছেন অনেক শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার এক বছর পূর্ণ করবেন ড. এমরান কবির চৌধুরী। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বড় স্বপ্ন দেখিয়ে আর রাজনৈতিক দৌরাত্মের অবস্থান নিয়ে সময় পার করেছেন তিনি। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের কথা ‘উপাচার্যের নিয়োগ পত্রে’ উল্লেখ থাকলেও কাজ থাকুক বা না থাকুক সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন তিনি রাজধানীতেই অবস্থান করেন। এমনকি তিনি যোগদান করার পর পূর্বের রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্বে নিয়ে আসেন। চলতি দায়িত্বের রেজিস্ট্রারও সপ্তাহের অনেক দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান না করার কারণে প্রশাসনিক অনেক কাজই আটকে থাকে।

এদিকে উপাচার্য যোগদানের পর সময়সীমা না মেনে ইচ্ছেমত সময়ে সিন্ডিকেট সভা করেছেন। তার এই অনিয়মতান্ত্রিকতায় সঙ্গী হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক নেতা ও কর্মকর্তা। তৈরী করেছেন নিজের ইচ্ছেমত বিভিন্ন পদ ও পদবী। এদিকে শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ১ বছরের মধ্যে না হওয়ায় বিষয়গুলো স্বপ্ন দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন উপাচার্য বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করার পর সে সব দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন উপাচার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন দেখেনি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল স্নাতোকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো, সমাবর্তনের আয়োজন, শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল গঠন, বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন’র (বিআরটিসি) ফিটনেসবিহীন বাস পরিবর্তন, সমগ্র ক্যাম্পাস ওয়াইফাই আওতাভুক্ত করা, হলের খাবারে ভর্তুকি প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি। এসব দাবিগুলো সর্বোচ্চ বিবেচনায় বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও উপাচার্যের প্রশাসন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বলে শিক্ষার্থীরা জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, উপাচার্য আমাদের বারবার বিভিন্ন স্বপ্ন দেখালেও এখনো তা স্বপ্নেই রয়ে গেছে, বাস্তবে তেমন কিছুই দেখছিনা। উপাচার্য আসার পর থেকেই বাস বৃদ্ধি, রাস্তা সংস্কার, মাস্টার্সের ভর্তি ফি কমানোসহ বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘উপাচার্যকে সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়েই শিক্ষার্থীদের দাবী পূরণে আরো আন্তরিক হওয়া এবং জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব নয়, তাই বলে কি স্বাভাবিক কার্যক্রম থেমে থাকবে?’

বিভিন্ন সময়ে বিশ^বিদ্যালয়ের সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোন বক্তব্য প্রদান না করে তার নিয়োগকৃত গণমাধ্যম উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ প্রতিবেদনের জন্যও তার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয়ের আদেশে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেছি। ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানোর জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, সমাবর্তনের জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি আমরা ডিসেম্বরে সমাবর্তন করতে পারবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরিন রাস্তার টেন্ডার খুব শিগরই হবে এবং বাস চালক নিয়োগের কার্যক্রমও চলছে। দ্রুতই আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো।’

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুরু হয়ে বর্তমান চলমান থাকলেও তা চলছে ধীরগতিতে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। এছাড়াও নতুন করে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। এ উন্নয়ন কর্মকা-ে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও ক্যাম্পাসকে দুই অংশে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close