মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর
গুরুদাসপুরে তৈরি হচ্ছে ভেজাল খেজুর গুড়
প্রতিবছরের ন্যায় শীত মৌসুমে এবারও নাটোরের গুরুদাসপুরে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়েছে। মানুষের যোগান চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু এসব গুড়ে মেশানো হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক সোডা, ফিটকারী, গাছের ছাল ও বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় এ ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করছেন। জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক মোকাম গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় হাটসহ উপজেলার অন্যান্য হাটগুলোতে গুড় উৎপাদনকারী কমপক্ষে দশটি কারখানায় অবিরাম এসব ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। কিন্তু প্রসাশনের কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁচকৈড় মোকামে অবস্থিত একটি গুড় তৈরির কারখানায় বিভিন্ন বাজার থেকে কিনে আনা নিম্নমানের ময়লাযুক্ত গুড় মেঝেতে নোংরা স্যান্ডেল পায়ে গুড়ো করছে শ্রমিকরা। পাশেই রাখা হয়েছে চিনির বস্তা। দিনভর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ভেজাল গুড় তৈরি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুড়ের রঙ সাদা ও আকর্ষণীয় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। গুড়ের এই মোকামে প্রকৃত খাঁটি খেজুর গুড় চিনে উঠতে না পারায় ক্রেতারা স্বাদ গন্ধহীন ভেজাল গুড় কিনেই সয়লাব করছেন বিভিন্ন হাটবাজার। উপজেলার চাঁচকৈড় ও নাজিরপুর হাটের গুড় উৎপাদনকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কার্তিক মাসের মধ্যভাগ থেকে চৈত্রমাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে চলনবিল অঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর, চাটমোহর উপজেলায় বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে খেজুর গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারিরা এসব গুড় বিক্রি করছে।
প্রান্তিক গুড় উৎপাদনকারি রওশন আলী, খবির প্রামানিক ও কোরবান আলী জানান, তারা প্রতিটি গাছের জন্য মালিককে মৌসুম ভিত্তিক (খাজনা) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে থাকেন। খাঁটি গুড়ের উৎপাদন খরচ গড়ে ১০০ টাকা পড়ে। কিন্তু বাজারে এত দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়না। তাই গুড়ের চাহিদা ও উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে প্রতি ১০ লিটার খেজুর গাছের রসে দুই কেজি চিনি মিশিয়ে খেজুর গুড়ের রং সাদা ও শক্ত করেন তারা।
ঢাকা থেকে চাঁচকৈড় মোকামে গুড় কিনতে আসা পাইকার হানিফ আলী ও সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়ার আসমত ব্যাপারী জানান, এ অঞ্চলে খেজুর গুড়ের আগের ঐতিহ্য এখন আর নেই। প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমী গুড় উৎপাদনকারি ও মহাজনরা ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গুড়ের রং সাদা ও শক্ত করতে তারা যথেচ্ছাভাবে চিনির সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) গণপতি রায় বলেন, খেজুর গুড়ে ভেজাল মেশানোর বিচ্ছিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
"