মো. শহীদুল ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী)
চারঘাটে ত্রুটিপূর্ণ ছাপা দেখে বই নেয়নি অনেক শিক্ষার্থী
পাতা এলোমেলো, ডাবল মুদ্রণ, ছবিতে চেহারা বোঝা যায় না, লাল-সবুজের পতাকার রং পাল্টে গেছে
রাজশাহীর চারঘাটে নতুন বই হাতে পেয়েও মন খারাপ হয়েছে অনেক শিশুর। বইয়ের পাতা এলোমেলো। কবির চেহারা চেনার উপায় নেই। লাল-সবুজের পতাকার রং পাল্টে গেছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে এই বিভ্রাট বেশি হয়েছে। অনেক শিশু বই নেয়নি। আবার কেউ কেউ বদলে দেওয়ার শর্তে বই নিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে মলাট ঝকঝকে হলেও এর ভেতরে ছাপা ঝাপসা। কোনো কোনো বইয়ের পৃষ্ঠা এলোমেলো। এই বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠার পরে ৫৫ পৃষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও ৫৪-এর পরের পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া হয়েছে ৭০। এই বইয়ের ১৬টি পৃষ্ঠা বাদ পড়েছে। বইটির মলাট ওল্টালেই পতাকার একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে। কিন্তু বইয়ের ভেতরের পৃষ্ঠার ছাপা আর পরিষ্কার নয়। বইয়ের ৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি পতাকার ছবি ছাপা হয়েছে। এই পতাকার লাল অংশটুকু ফোটেনি। সবুজ রংটুকুও কালচে হয়ে আছে। ১০৮ পৃষ্ঠায় কবি পরিচিতি অংশে কবি শামসুর রাহমানের ছবি ছাপা হয়েছে। এতই কালিঝুলি মাখা ছবি যে নিচের নাম না পড়লে বোঝার উপায় নেই, কবি শামসুর রাহমানের ছবি এটি। একই অবস্থা করা হয়েছে ৪৩ পৃষ্ঠায় কবি সুকুমার বড়ুয়া ও ৫৫ পৃষ্ঠায় আহসান হাবিবের ছবিতেও। ঘাসফুল কবিতার কবি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ছবির দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, এই ছবির কোনো মুখ নেই। শুধুই কালো রং। ১১১ পৃষ্ঠায় ছাপা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ছবি দেখে কেউ চিনতে পারবে না। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুন এই বই না নিয়ে ফেরত দিয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, কয়টা বই এ রকম হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে খেয়াল করা হয়নি। মাহমুদা বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে পৃষ্ঠা এলোমেলো দেখে ফেরত দিয়ে গেছে। অন্য কোথাও এ রকম হয়েছে কি না। জানার জন্য চারঘাট উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফোন করলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, তারাও এ ধরনের বই পেয়েছেন। শিক্ষকেরা আরও জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণির গণিত বইয়ের ৪১ থেকে ৫৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দুবার ছাপা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বইয়ের চালানে উল্লেখ ছিল, রাজশাহী জেলায় বই ছাপা ও সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঢাকা। কিন্তু রাজশাহীতে বলাকাা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঢাকা থেকে মুদ্রিত বইও সরবরাহ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল খায়ের বলেন, কোনো বই ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেলে সেগুলো বিদ্যালয়ে জমা দিলেই পরে তাদের ভালো বই সরবরাহ করা হবে। অন্য প্রকাশনা থেকে বই ছাপার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা তাঁদেও দেখার বিষয় নয়। তারা বই পেয়েছেন, এটাই বড় কথা।
"