তারেক হাসান
ফড়িং
প্রতিদিনের মতো আজও মাহিন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দিল। মা পেছন থেকে ডেকে বলেÑরাস্তায় দুষ্টুমি করিসনে।
-আচ্ছা মা!!!
মাহিনের বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় দেড় কিলোমিটার, গ্রামের রাস্তায় কোনো যানবহন নেই, তাই হেঁটেই যেতে হয় স্কুলে। ছোট মানুষ কষ্ট হয়, এতদূর রাস্তা পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া; কিন্তু প্রতিদিন যাওয়া-আসাতে এখন আর তেমন অসুবিধা হয় না মাহিনের। গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে যেতেই সঙ্গী পেয়ে গেল মাহিন, তার নাম রাসেল। সঙ্গী দুরন্তপনা বেড়ে যায় মাহিনের। কিছুপথ যেতেই চোখ পড়ে মৌমাছির বাসা, রাসেল কোনো কিছু বলার আগেই মাহিন ঢিল ছুড়ে মৌমাছির বাসায়। আর মৌমাছি উড়ে এসে কয়েকটা কামড় বসিয়ে দেয় মাহিনের পিঠে। রাসেল দৌড়ে পালায় ঝোপের আড়ালে। দুষ্টুমির সাজা সঙ্গে সঙ্গেই পেল, এবার গায়ের জামাটা খুলে চুলকাইতে লাগল, আর রাসেলকে ডাকতে থাকে... রাসেল তো ভয়ে আর কথাই বলে না। মৌমাছির কামড়ে গায়ের অনেক জায়গায় ফোলে লালচে দাগ হয়ে গেছে, ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল; কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না। এক মহিলা দেখতে পায় মাহিনের এই কা-, ওই মহিলা এগিয়ে আসে মাহিনের কাছে। দেখে গায়ের অনেক জায়গায় কামড় দিয়েছে এবং ফোলেও গেছে তাই মহিলার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটু চুন লাগিয়ে দেয়। ততক্ষণে রাসেল ঝোপের আড়াল থেকে এসে মাহিনের পিছে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর মাহিনকে বলে তুই বাড়ি চলে, যা আমি স্কুলে যাচ্ছি। মাহিন রাজি নয় কারণ বাড়িতে গেলে তার মা বকা দেবে এই ভয়েই আবার স্কুলের দিকে রওনা দিল।
কিছুদূর গেল ভালোই হয়তো, ততক্ষণে ভুলে গেছে তাকে যে মৌমাছি কামড়িয়েছে... হঠাৎ মাহিনের নজরে পড়ল কচুপাতার ওপর একটা ফড়িং বসে আছে। এবার বিড়ালের মতো ঘাপটি মেরে পা ফেলাতে লাগল, যেই ছুঁ মেরে ধরতে গেল, অমনি ফড়িং উড়ে অন্য একটা ঝোপের ওপর বসল। আবার আগের মতোই তার পিছু লাগল, এখান থেকে ওখানে ফড়িং উড়ে যাচ্ছে আর সে পিছু ধাওয়া করছে। রাসেল বারবার ডাকছে স্কুলে যাবি না? মাহিন উত্তরে বলছে দাঁড়া একসঙ্গেই যাব। এবার ফড়িং উড়ে গিয়ে বসল আমগাছের মগডালে। আর মাহিন আমগাছ বেয়ে ওপরে উঠছে, রাসেল বারবার বলছে নেমে আয় ওখানে উঠতে পারবি না...। কিন্তু কোনো কিছুই কানে যাচ্ছে না মাহিনের। একসময় সেই মগডালে উঠে গেল মাহিন... যেই ছুঁ মেরে ধরতে গেল ফড়িংটিকে, অমনি সেই মগডাল ভেঙে নিচে পড়ে থাকা একটা গাছের গুঁড়ির ওপর এসে পড়ল। চিৎকার দিয়ে উঠলো রাসেল, তার চিৎকার শুনে অনেক লোক ছুটে এলো সেখানে। মাহিনের দুকান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সেখানের আর কারো বুঝতে বাকি রইল না যে মাহিন আর বেঁচে নেই... একটা ফড়িংয়ের জন্য অকালে প্রাণ হারালো মাহিন...
"