সম্পাদকীয়

  ০৫ মার্চ, ২০২০

রোহিঙ্গা যেন বিষফোঁড়া হয়ে না যায়

বাংলাদেশ মানবতার দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। থাকার জন্য বাসস্থান দিয়েছে। সাধ্যমতো খাবারের বন্দোবস্ত করেছে। স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তাদের আচরণ দিন দিন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

এ কথা সত্য যে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ সব সীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে আশ্রয়দাতার ক্ষতিসাধন করাই যদি সীমা লঙ্ঘন হয়, তখন তা সাবলীলভাবে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকের মতে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আচরণ অনেকটা সে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

দিন যত যাচ্ছে, ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। নানা ধরনের নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। খুন-ধর্ষণ থেকে শুরু করে চুরি-ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার, চোরাকারবারিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করছে না। কর্মহীন রোহিঙ্গাদের মাঝে এই অপরাধপ্রবণতা বাড়ার মাত্রা যেন আজ সব সীমাকে অতিক্রম করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই আশ্রয় আজ তাদের জীবনের ওপর এক বিষফোঁড়ার জন্ম দিয়েছে।

তথ্যমতে, উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের শৃঙ্খলার বৃত্তে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা অপরাধের দায়ে প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা আজ কারাভোগ করছে। ঠিক এ রকম এক বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের জনজীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে সচেতন মহল। দ্রুত প্রত্যাবাসনই এই নেতিবাচক আচরণের একমাত্র সমাধান বলে মনে করছেন তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত দুই বছরে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ও মানব পাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। এরমধ্যে মাদক মামলার সংখ্যাই ২০৮। এ ছাড়া হত্যা মামলা রয়েছে ৪৩টি এবং নারী-সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। আর এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ জন।

এদিকে প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে; যা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা বিব্রতকর অবস্থা বললে বেশি বলা হবে না। তাই এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। আমরা মনে করি, বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে বলি দেওয়াটাই শ্রেয়। তাই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করাই হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে যদি সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গারা যে সমস্যার জন্ম দিয়েছে, তা একটি ভাইরাসের মতো। যেকোনো সময়ে তা ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। অতএব আগাম চিন্তা এবং পদক্ষেপ নেওয়াটাই হবে সময়ের উপযোগী সিদ্ধান্ত।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,রোহিঙ্গা,অপরাধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close