সম্পাদকীয়

  ০২ অক্টোবর, ২০১৯

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চাই

দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও দফায় দফায় লাফ দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের মূল্য। বাড়ার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তবে কোনো কারণ ছাড়া এমনিতেই দাম বাড়েনি। কারণ নিহিত আছে নিয়ন্ত্রণকারীদের লুটেরা মনোভাবের অন্তরালে। এই নিয়ন্ত্রণকারী কারা? সরাসরি বলতে গেলে বলতে হয়, এরা দেশের বড়মাপের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অনেকের মতে, এদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এরা এই কর্মটি করে থাকেন।

গত ৬ জুলাই কেজিপ্রতি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল ৩০-৩৫ টাকা। ৭ জুলাই ৪৫-৫০ টাকা। ১৪ সেপ্টেম্বর ৭০-৮০ টাকা। ৩০ সেপ্টেম্বর ১১০-১২০ টাকা। ৩০ টাকা থেকে ১২০ টাকা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র পৌনে তিন মাস সময়ের মধ্যে। যে সময় বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। দেশীয় উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রায় তেমন একটা ঘাটতি ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন, তাহলে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির রহস্য কী!

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনো প্রায় তিন লাখ টন পেঁয়াজচাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী ৫০ থেকে ৫৫ দিন দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর এ সময়ের মধ্যে আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজ বাজারে ঢুকবে। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণার পরও এদিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২৬৮ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে বাংলাদেশে। আগের দিন এসেছে ৪৩৭ টন। আবার গত সোমবার মিয়ানমার থেকে এসেছে ৫৩৬ টন। আগের দিন একই দেশ থেকে এসেছে ১৭৪ টন। একই সময় মিসর থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে ১৪৫ টন। তারপরও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বলছে, বিদেশে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারাও বাড়িছেন।

তাদের এ বক্তব্যের মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। কেননা, এ সময়ের মধ্যে যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, তা ছিল আগের নির্ধারিত মূল্যে। সে পেঁয়াজ এখন আসতে শুরু করেছে এবং বাকিটা পাইপলাইনে আছে। এই পেঁয়াজের দেহে বাড়তি কোনো কিছুর ছোঁয়া লাগার সুযোগই নেই। সুতরাং পেঁয়াজ নিয়ে যা কিছুই ঘটছে, তা শুধু সেই ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক মানসিকতা। এই মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া অথবা করানো দরকার। এক. ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে তা করতে পারেন অথবা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তাদের এ মানসিকতা পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে।

সম্ভবত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ করে পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার জন্য বাজারে নেমেছে এবং যার তাৎক্ষণিক প্রতিফলনও চোখে পড়ছে। পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকারের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজের মূল্য পূর্বমূল্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেই সমাজ বিশ্লেষকদের ধারণা।

কেবল পেঁয়াজের ক্ষেত্রেই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের হস্তক্ষেপ নেওয়া আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। চলমান ব্যবস্থার পাশাপাশি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সমন্বয়ে একটি চেইনশপ আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। যার কারণে বাজারে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা ফিরে আসতে পারে। আমরা সেই সুস্থ প্রতিযোগিতার প্রত্যাশী।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজার নিয়ন্ত্রণ,সরকার,পদক্ষেপ,সম্পাদকীয়,পেঁয়াজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close