মালিতে ভয়াবহ ধর্ষণের শিকার নারীরা
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। সেখানে কথিত ইসলামিক স্টেট ইন দ্য গ্রেটার সাহারা’র (আইএসজিএস) সশস্ত্র গ্রুপের হামলায় পূর্বাঞ্চলীয় ওটাগোনা থেকে পালাচ্ছে মানুষ। সীমান্ত অতিক্রম করে তারা পাশের দেশ নাইজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু সীমান্তে মালির সেনাদের হাতে ধরা পড়লে নারী ও টিনেজার মেয়েদের রক্ষা নেই। ওইসব সেনা অস্ত্রের মুখে তাদেরকে ধর্ষণ করে। পুরুষদের সঙ্গে তারা এই দীর্ঘ সফর করলেও সেনারা পুরুষদের থেকে মেয়েদের আলাদা করে ফেলে। ১৭ বছর বয়সী টিনেজ মেয়ে এবং নারীদের আলাদা করে তাদেরকে ধর্ষণ করে ওইসব সেনা। এ সময় তাদের হাতে-পায়ে ধরেও রেহাই পায় না ওইসব মেয়ে। এমনি এক করুণ কাহিনী প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, জুনের শুরুর দিকে কানি (ছদ্মনাম) ও অন্য ১০ জন সহিংসতা থেকে পালাতে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাবেজাঙ্গা চেকপয়েন্টের কাছে পৌঁছেন।
এ সময় তাদেরকে চেকপয়েন্টে থামিয়ে দেয় সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ৬ সশস্ত্র ব্যক্তি। আগের দিন পায়ে হেঁটে এই যাত্রা করেছিল ওই দলের নারী-পুরুষরা। তাদের পেটে খাবার নেই। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত, অবসন্ন তারা। কানি (১৭) বলেছে, ওই সেনাসদস্যরা নারী ও পুরুষদের আলাদা করে ফেলে। তাদের মধ্য থেকে তিনজন নির্দেশ দেয় দলে থাকা আমাদের চারজন মেয়েকে একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করতে। নাইজার সীমান্তের কাছে এই তাঁবু গড়ে তুলেছিল ওই সেনারা। তার ভেতর তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে ধর্ষণ করে।
বর্তমানে নাইজেরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর আওউরোউ’তে অবস্থান করছেন কানি ও অন্য কিছু শরণার্থী। কয়েক বছরে তারা সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কানির পরনে রঙিন একটি পোশাক। মাথায় স্কার্ফ। তাকে দেখে ভয়ার্ত ও হতাশ মনে হয়। মাথা নিচু করে সে বলে, ওই ঘটনার পর কোনো পুরুষের হাতে অস্ত্র দেখলে সে ভীত শঙ্কিত হয়ে যায়। তার ভাষায়, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী আমাকে ভীত করে তুলেছে। কারণ, তাদেরকে দেখলেই ওইসব ধর্ষকের কথা মনে ভেসে ওঠে।
এভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে যেসব টিনেজ বা যুবতী তাদের একজন ১৭ বছরের কোম্বা (ছদ্মনাম)। সে বলেছে, আমরা দীর্ঘ সফর করেছি। খাবার এবং পানি ছিল না। ফলে আমরা ক্ষুধায় এবং ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছিলাম। এমন অবস্থায় আমাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেনাদের কাছে অনুনয় করেছি। কিন্তু তারা কোনো কথা কানে তোলেনি। এক পর্যায়ে তারা বন্দুক দিয়ে আমাদের প্রহার করতে থাকে। আমরা যেন কোনো কথা না বলি সে জন্য আঘাত করতে থাকে। পুরো সাক্ষাৎকারে কোম্বা অঝোরে কেঁদেছে। সে বলেছে, সীমান্তে আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যখনই মনে পড়ে আমি খুব ভীত হয়ে যাই। কানি’র মতো সেও এই এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছে।
এই দুই টিনেজার মেয়ে মালির পূর্বাঞ্চলীয় ওটাগোনা থেকে একসঙ্গে নাইজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল। একইভাবে কমপক্ষে ১০ হাজার মালির নাগরিক সহিংসতা থেকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আওউরোউতে। এটি একটি পুরনো এলাকা। নাইজার নদী একে আলাদা করে একটি দ্বীপে পরিণত করেছে। এই শহরের বাইরের দিকে শুকনো এবং আবর্জনায় ভরা এলাকায় শরণার্থীদের জন্য নির্মিত তাঁবুতে তাদের কেউ কেউ বসবাস করে। অন্যরা শহরের ভেতরে স্থানীয় পরিবারগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পেয়েছে। সেখানে বেশির ভাগ পরিবার কৃষিকাজ করে। খাদ্যসামগ্রী এবং গবাদিপশু বিক্রি করে বাজারে। মূল শহরে কাজ খুঁজতে যাওয়ার আগে কিছুদিন স্থানীয় কৃষকদের কাজ করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কানি ও কোম্বা। তাদেরকে তারা থাকার সুযোগ দিয়েছে। এতে তারা বেশ খুশি হয়েছিল। তারপর তারা নতুন তৈরি ওইসব বসতিতে চলে গিয়েছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে নাইজারে যাওয়া তাদের জন্য ভুল হয়েছে। কোম্বা বলেছে, মালি ছেড়ে আসার পর আমরা আরেক নরকে পড়বো এটা জানতাম না। যদি জানতাম কেউ আমাদেরকে ধর্ষণ করবে, তাহলে গ্রাম ছেড়ে মালিতেই অন্য কোনো সম্প্রদায়ের কাছে চলে যেতাম।
মালি থেকে নাইজারে গিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী সাইদু কামারা। তিনি একজন পুরুষ। বর্তমানে ওই শহরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে আমরা শুনতে পেয়েছি নারীদের আর্তনাদ। তারা ওইসব অস্ত্রধারীদের কাছে নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য অনুনয় বিনয় করতেন। এসবই আমরা শুনেছি। আমরা কিছুই করতে পারিনি।
কারণ, ওইসব লোকের হাতে অস্ত্র আছে। আমরা যদি নারীদের উদ্ধারের সাহস দেখাতে যাই তাহলে তারা গুলি করতো। কোম্বা বলেছে, ওই অস্ত্রধারী সদস্যরা আমাদেরকে বলতো- তারা সীমান্ত অতিক্রম করে নাইজারে যেতে দেবে, যদি তাদের সঙ্গে আমরা শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হই। তারা প্রতিটি মেয়েকে ধর্ষণ করার পর তাদেরকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দিয়েছে। এ সময় পুরুষদের কাছে থাকা সব অর্থকড়ি কেড়ে নিয়েছে।