আবদুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বনের ভেতর যান চলাচল, হুমকিতে প্রাণীকুল

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটক। ছবিটি গতকাল তোলা প্রতিদিনের সংবাদ

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে আট মাসে লাউয়াছড়ায় সড়কে ও বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ৮টি বন্যপ্রাণী মারা গেছে। হঠাৎ সামনে পড়ে দ্রুতগতির ট্রেন বা যাত্রীবাহী বাস। অথবা বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ৩৩ কেভিজাতীয় গ্রিড লাইন। আর তখনই মৃত্যু অনিবার্য। বিরল প্রজাতির বানর হুনুমান অজগর উল্লুক বাঁদুর বিদ্যুতায়িত হয়ে, ট্রেনে কাটা পড়ে, না-হয় গাড়িচাপায় অথবা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে। বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ ও সড়ক যাওয়ার কারণে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া এখন বন্যপ্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, গত ৮ মাসে এই বনের দুটি বানর, একটি মুখপুড়া হনুমান, ১টি চশমাপরা হনুমান, একটি উল্টো লেজি বানর, একটি গন্ধগোকুল, একটি বেজী ও একটি মেচোবাঘ দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরমধ্যে মুখ পুড়া হনুমান বিদ্যুতের গ্রিড লাইনে আর বাকিগুলো সড়কে প্রাণ হারায়।

আরো জানা গেছে, বন্যপ্রাণী অধ্যাদেশ ১৯৭৪-এর ২ ও ৩ ধারা মতে ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মধ্যবর্তী পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকা জাতীয় উদ্যান তথা ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। সেখানের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নেওয়া হয়েছিল সেই উদ্যোগ। কিন্তু ১৯৯৭ সালে মাগরছড়া গ্যাসকুপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে বন ও বন্যপ্রাণীর সীমাহীন ক্ষতি হয়, যা এখনো পুষিয়ে ওঠা যায়নি। এমন অভিমত বন গবেষকদের।

বনবিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির শরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই কয়েক বছরে ১৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়েছে।

প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর অন্যতম অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ৭ কিলোমিটার রেলপথ ও পাকা সড়ক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোয়াইমিন মিল্টন বলেন, বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ ও বিদ্যুৎ লাইন থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। ট্রেনে কাটা পড়ে ও যানবাহনে চাপা পড়ে এমনকি বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে গত ২ বছরে উল্লুক, কাঁঠবিড়াল, চিত্রা হরিণ, হনুমান, বানর, চশমা পরা বানরসহ অনেক বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এখন বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেলপথ ও পাকা সড়ক হয় বন থেকে সরানো, না-হয় ফ্লাইওভার করে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া বিদ্যুৎলাইনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য আমরা বনের ভেতর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি শুরু করেছি। উদ্যান এলাকায় বাস ট্রেনের গতি কোনো অবস্থায় ২০ কিলোমিটারের বেশি হবে না।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লাউয়াছড়া থেকে সড়কপথ সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বন্যপ্রাণী,প্রাণীকুল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close