জহিরুল ইসলাম, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

  ১১ মে, ২০২২

কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসার আড়ালে মাদক ও যৌন ব্যবসা 

ফাইল ছবি।

সমুদ্রনগরী কুয়াকাটা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন অঞ্চল। তবে বর্তমানে কুয়াকাটার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে একটি নেতিবাচক বিষয় যার নাম মাদক ও যৌন ব্যবসা। গুটি কয়েকজন লিজ নেয়া হোটেল মালিক ও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে কুয়াকাটার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড় হয়েছে কুয়াকাটায়। সেই সুযোগে মাদক ও যৌন ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, কুয়াকাটার পৌরসভাসহ আলিপুর, কালাচান পাড়া, আমখোলা পাড়া, মিশ্রি পাড়াসহ বিভিন্ন স্পটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দু-চারজন গ্রেপ্তার হলেও নেপথ্যের গডফাদাররা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহআলম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, পাঁচতারা হোটেল, হোটেল ওমরখান, হোটেল এ আর খান, বীচ ভ্যালি, হোটেল নেক্সট এইসব হোটেলে প্রতিনিয়ত চলছে যৌন ব্যবসা। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন এইসব হোটেল থেকে যৌনকর্মীদের উদ্ধারসহ গ্রেপ্তারও করেছিলেন। আমরা হোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অনৈতিক ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও মানছেনা কেহই। আমি মনে করি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি প্রতিদিন গেস্ট লিস্ট অনুযায়ী চিহ্নিত হোটেলগুলিতে অভিযান পরিচালনা করেন তাহলেই সম্ভব মাদক ও যৌন ব্যবসা বন্ধ করা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দেয়া তথ্যমতে, এলাকার চিহ্নিত লিয়াকত অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার অধীনে নিরালা ও ঝিলিক নামে দুটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল ব্যবসার আড়ালে সে মাদক ও নারী ব্যবসা পরিচালনা করছে। এছাড়াও হোটেল মোটেল জোনে গড়ে ওঠা রেডিসন, ডলফিন, রনি, পায়রা এসব গেস্টহাউসের বেশির ভাগ ভাড়ায় পরিচালিত হয়। অপরাধীরা বাৎসরিক চুক্তিতে এককালীন ভাড়া নিয়ে পর্যটন ব্যবসার আড়ালে মাদক ও নারী ব্যবসার আখড়া তৈরি করা হয়।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েকটি হোটেলের অসাধু ব্যবসায়ীরা কুয়াকাটার পরিবেশ নোংরা করছে। কোনভাবেই কুয়াকাটাতে নারী ও মাদক ব্যবসার প্রসার না ঘটে প্রশাসনকে সে ব্যপারে কঠোর হতে হবে। আমরা মনে করি পর্যটন এলাকায় এসব অবৈধ ব্যবসা মুক্ত থাকলে পরিবেশ সুস্থ থাকবে এবং পর্যটন বেশী আসবে। যারা এই অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত তারা বেশিরভাগই লিজ নেয়া হোটেল মালিক। যতটুকু জানতে পেরেছি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এরা চার/পাঁচ বছরের জন্য হোটেল লিজ নিয়ে থাকে। অল্প সময়ে কীভাবে লাভসহ ইনভেস্টের টাকা তুলে নিবে সেই জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে।

মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খোন্দকার মো. আবুল খায়ের প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, কুয়াকাটার পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য মহিপুর থানার প্রশাসন সবসময়ই কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের তৎপরতার কারণেই এতোদিন এই ধরনের কোন অভিযোগ ওঠেনি। বর্তমানে অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০মে হোটেল এ আর খান থেকে মালিক ও পতিতাসহ ৪ জন আটক করা হয়েছে। কুয়াকাটাকে মাদক ও পতিতা মুক্ত রাখতে মহিপুর থানা পুলিশ বদ্ধপরিকর। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুয়াকাটা,হোটেল ব্যবসা,যৌন ব্যবসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close